আয়কর রিটার্ন জমা নভেম্বরের মধ্যে, এজেন্ট নিয়োগে অগ্রগতি কতটা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চলতি অর্থবছরের প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো খুব বেশি অগ্রগতি নেই। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য রিটার্ন জমার সময় মাত্র এক মাসের মতো বাকি আছে। তবে এই সময়ের মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ের এই রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের নিয়োগ দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এনবিআর জানিয়েছে, এ সময়ের পরেও অনুমতি নিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির বিভিন্ন সুবিধা মিলবে না।

এনবিআর রিটার্ন প্রস্তুতকারী বিধিমালা জারি করেছিল গত ২৬ জুন। এই বিধিমালা অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে করদাতাদের রিটার্ন প্রস্তুত করায় সহায়তা দিতে বেসরকারি ব্যক্তি বা এজেন্ট নিয়োগ করবে এনবিআর। তাঁদের সনদও দেবে। তবে ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা এজেন্টের মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করার ক্ষমতা থাকবে না। ওই সব ব্যক্তি শুধু করদাতাদের রিটার্ন প্রস্তুত ও জমার ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন। এ জন্য এই করদাতার দেওয়া করের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন রিটার্ন প্রস্তুতকারী।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রিটার্ন প্রস্তুতকারী নিয়োগ দিতে কাজ করছে একটি দল। ওই দলটি রিটার্ন প্রস্তুতকারী নিয়োগ দিতে যে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তার সিলেবাস তৈরি করছে। এর পাশাপাশি ওই নিয়োগ করা ব্যক্তিদের মাধ্যমে রিটার্ন জমার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাও তৈরির কাজ চলছে।

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত আয়কর বিভাগের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ নভেম্বরের আগেই পুরো ব্যবস্থাটি চালুর চেষ্টা চলছে। সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, সাচিবিকবিদ্যায় দক্ষতা অর্জনকারী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবী ও কর আইনজীবীদের মতো দক্ষ ব্যক্তিদের পরীক্ষা দিতে হবে না। পরীক্ষা ছাড়াই তাঁরা সনদ পাবেন। আপাতত তাঁদের মাধ্যমেই ব্যবস্থাটি চালু করা হতে পারে।

অনিশ্চয়তা কমিশনের অর্থ নিয়েও

বেসরকারি রিটার্ন প্রস্তুতকারী হিসেবে যাঁরা নিয়োগ পাবেন, তাঁদের কমিশন দেবে এনবিআর। কিন্তু আদায় করা শুল্ক–কর থেকে এই কমিশন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আয়কর বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা। তাঁদের মতে, এর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ লাগবে। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় এ–সংক্রান্ত কাজে এখনো আলাদা কোনো বরাদ্দ রাখেনি।

যে করদাতা যত টাকা কর দেবেন, তার একটি অংশ পাবেন ওই রিটার্ন প্রস্তুতকারী। এনবিআরের খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম তিন বছর ন্যূনতম করের ১০ শতাংশ; পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করের ২ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার ১ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের দশমিক ৫ শতাংশ পাবেন রিটার্ন প্রস্তুতকারী। অন্যদিকে চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য ন্যূনতম করের ওপর ৫ শতাংশ; পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করের ওপর ১ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার দশমিক ৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর দশমিক ২৫ শতাংশ কমিশন পাবেন তিনি।

আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীকে কম্পিউটার, ল্যাব, প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বেসরকারি সহায়তা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার বিষয়েও কাজ চলছে এনবিআরে। কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের আয়কর আইন ও করব্যবস্থা নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে।

তবে বেসরকারি রিটার্ন প্রস্তুতকারী নিয়োগ দিলেও আয়কর আদায় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তা খুব বেশি সাহায্য করবে না বলে মনে করেন আয়কর আইনজীবীরা। এ বিষয়ে জেএনজে অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কর আইনজীবী মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের বেসরকারি রিটার্ন প্রস্তুতকারী নিয়োগ দেওয়া হলে বরং আরও জটিলতা বাড়বে। তাঁরা রিটার্ন ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে দেবেন। কিন্তু তাঁদের (রিটার্ন প্রস্তুতকারী) কর গণনা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে বিপাকে পড়বেন করদাতারা।

মোহাম্মদ সোহেল রানা আরও বলেন, একজন রিটার্ন প্রস্তুতকারী কমিশনের বিনিময়ে একজন করদাতার সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ বছর কর নথি জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে কর আইনজীবীদের ‘ক্লায়েন্ট’ সারা জীবনের জন্য। তাই রিটার্ন প্রস্তুতকারী নিয়োগ দেওয়ার এ উদ্যোগটি খুব বেশি কাজে লাগবে না।

প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র ৯০ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেন মাত্র ৩০ লাখ মানুষ, যা মোট জনগোষ্ঠীর পৌনে ২ শতাংশ। রিটার্ন জমার সময় আইনজীবী কিংবা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নেন বেশির ভাগ করদাতা। আগে কর মেলা হতো, সেখানেও রিটার্ন তৈরির বুথগুলোতে বেশ ভিড় থাকত। কিন্তু কোভিড শুরুর পর কর মেলা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরে নভেম্বর মাসব্যাপী প্রতিটি কর অঞ্চলে মেলার মতো সহায়তা বুথ থাকবে।