চালের দাম কমাতে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের পরও দাম কমেনি।
বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে ডলার–সংকটের কারণে আমদানিতে গতি নেই। বাড়তি দামে এখন বড় চালানে চাল আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে খুচরা বা পাইকারি কোনো বাজারেই চালের দামে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী, তেজগাঁও ও বিজয় সরণির কলমিলতা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মোটা চাল গুটি স্বর্ণার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায়। মাঝারি ধরনের চাল পাইজাম ও বিআর-২৮–এর কেজি মিলছে ৫২ থেকে ৫৮ টাকায়। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায়। আর এক কেজি নাজিরশাইল চালের দাম পড়ছে মানভেদে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। দেড় মাস ধরে খুচরা ও পাইকারি বাজারে চালের দাম প্রায় এ সীমার মধ্যেই রয়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও চালের বাজারদরের প্রায় একই চিত্র পাওয়া গেছে। টিসিবির বৃহস্পতিবারের বাজারদরের তালিকা বলছে, রাজধানীর বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। মাঝারি ধরনের চাল ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।
টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহ আগে এসব চালের মধ্যে মোটা চালের দাম ছিল একই—কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। তবে মাঝারি চালের কেজি ছিল ৫২ থেকে ৫৮ টাকা এবং সরু চাল ৬৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
নিউমার্কেটের কাঁচা বাজারের বাংলাদেশ রাইস এজেন্সির মো. আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে মিলমালিকদের বিকল্প উপায়ে ধান থেকে চাল করতে হচ্ছে। তাতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় চালের দাম আরও বাড়তে পারে। এদিকে আমদানি কম হচ্ছে। যেটুকু বাজারে এসেছে, সেটাও দেশি চালের দামের প্রায় সমান। এতে করে বাজারে প্রভাব নেই।’
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ২৩ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ২৯টি ট্রাকে ১ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।
বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়তে থাকায় মাছের দাম কমতে শুরু করেছে। ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম আরেকটু বেশি।
ঢাকার বাজারে ইলিশ আসতে শুরু করায় অন্যান্য মাছের দাম কমতে শুরু করেছে উল্লেখ করে মহাখালী কাঁচাবাজারের মাছ ব্যবসায়ী শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইলিশ বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে এখনো অনেক বেশি যে আসছে, তা নয়। বাজারে মাছের সরবরাহ আরও বাড়লে দাম স্বাভাবিকভাবে আরেকটু কমে আসবে।’
বাজারে ছোট আকারের রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৮০ টাকায়। বড় আকারের রুইয়ের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ টাকার মধ্যে। চাষের কই বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে। তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, পাঙাশ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, মাঝারি আকারের বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে।
মুরগি ও গরুর মাংসের দাম অনেকটাই অপরিবর্তিত। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে। বাজারে প্রতি ডজন মুরগির ডিমের (লাল) দাম ১২০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজি। কাঁচা মরিচের দামটা এখনো বাড়তি। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।