মূল্যস্ফীতি
মূল্যস্ফীতি

মূল্যস্ফীতি কমাতে দুই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, আরও সহজ হচ্ছে আমদানি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আবার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছার পর সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। এর আগে কয়েক দফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেওয়ার পরও মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা সম্ভব হয়নি।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, ঋণপত্র বা এলসি মার্জিন ছাড়াই নিত্যপণ্য আমদানি করা যাবে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান খাদ্য, নিত্যপণ্য ও সার আমদানি করে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কোনো সীমা থাকবে না। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী সপ্তাহে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

আজ ঢাকায় সচিবালয়ে সরকারের তিনজন উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বৈঠকে যোগ দেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আজই জানিয়েছে যে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গত মাস অর্থাৎ অক্টোবরে হার ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছরের একই মাসে যে খাদ্যপণ্য কিনতে একজন ভোক্তাকে ১০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে, এ বছর একই পরিমাণ খাদ্যপণ্য কিনতে তাকে ১১২ টাকা ৬৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

একইভাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বিবিএসের এই পরিসংখ্যান মূলত গত মাসের চড়া বাজার পরিস্থিতিকেই প্রতিফলিত করেছে। এই মাসে প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে। এক ডজন ডিম কিনতেই একজন ক্রেতাকে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির দামও নিম্নবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল।

আজকের বৈঠকের পর গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে, তবে সরকার এখন মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হিসাব দিচ্ছে। এর আগে মূল্যস্ফীতির হিসাব কৃত্রিমভাবে কমিয়ে দেখানো হতো। তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ও মূল্যস্তর এক বিষয় নয়। অনেক সময় মূল্যস্ফীতি কমলেও পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে।’

বৈঠকে ঋণপত্র বা এলসি মার্জিন ছাড়াই নিত্যপণ্য আমদানি করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে কোনো অর্থ জমা দেওয়া ছাড়াই এলসি খুলতে পারবেন। অর্থাৎ ব্যাংক যদি তার গ্রাহকের ব্যাপারে আস্থাশীল থাকে, তাহলে বাকিতেই ঋণপত্র খুলতে পারবে।

দ্বিতীয়ত, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় গ্রাহকদের জন্য ‘সিঙ্গেল বরোয়ার লিমিট’ প্রযোজ্য রয়েছে। অর্থাৎ একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কোনো ব্যাংক থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ঋণ পায় না। এখন এই সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার ফলে বড় আমদানিকারকেরা প্রয়োজনীয় ব্যাংকঋণ পাবেন। এই সুবিধা পাওয়া যাবে খাদ্য ও নিত্যপণ্য এবং সার আমদানির ক্ষেত্রে।

তবে কত দিনের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হবে, তা প্রজ্ঞাপনে জানানো হবে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।