ঢাকার পাইকারি বাজারে ফার্মের মুরগি ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই দাম কমছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীত মৌসুম চলে আসায় ব্যবসায়ীরা খামার থেকে মুরগি ছাড়ছেন বেশি। এতে ব্রয়লারের সরবরাহ বেড়ে দাম কমেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিমের দামও পড়তির দিকে।
রাজধানীর পাইকারি বাজার ও খুচরা পর্যায়ের ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পাইকারিতে প্রতি ডজন বাদামি রঙের ডিমের দাম ১১০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা হালিপ্রতি ডিমের দাম রাখছেন এখন ৪০ টাকা। এতে প্রতি ডজনের দাম দাঁড়ায় ১২০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে অন্তত ২০ থেকে ২৫ টাকা কমেছে।
গত এক মাসে পাইকারিতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। এখন প্রতিকেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা খুচরায় রাখা হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে বেশি পরিমাণে কিনলে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে দাম আরও কিছুটা কম পড়ে। তাতে কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগির খুচরা মূল্য এখন ১৫০ টাকার নিচেও মিলছে। বাজারে সোনালি মুরগির দামও কমেছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগির দাম পড়ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিমের দাম এখন একেবারে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আর কয়েক দিন হলো মুরগির দামও কমতির দিকে। তবে দাম একটু বেশিই কমেছে। কিন্তু দাম বেশি পড়ে গেলে খামারিরা আবার উৎপাদন কমাই দিতে পারেন। তাতে বাজার আবার চড়ে যাবে।’
দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিমের দাম যেন ‘রকেটগতিতে’ বেড়ে যায়। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে তখন প্রতিহালি ডিমের দাম ৫৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে আগস্টের শেষ সপ্তাহে দাম আবার কমতে শুরু করে। এরখন তো ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিহালি ৪০ টাকায় নেমে এসেছে।
ক্ষতির মুখে প্রান্তিক খামারিরা ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন বলে দাবি বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদারের। আলাপকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উৎপাদন খরচ অনেক বাড়তি, আবার সিন্ডিকেটের কারণে ছোট খামারিরা ডিম ও মুরগির দাম পাচ্ছেন না। ফলে ব্যবসা করতে না পারায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে খামার গুটিয়ে নিচ্ছেন। এ জন্যই বাজারে সরবরাহ বেশি, দাম কম। তবে ভবিষ্যতে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র খামারিদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে সুমন হাওলাদার বলেন, খামারিরা ব্যবসা ছেড়ে দিলে এই শিল্পে বড় করপোরেটরা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করবে। তখন ডিম ও মুরগির দাম সাধারণ মানুষের একেবারে নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। সুতরাং, সরকারের উচিত এখনই জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২ অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। এই ডিম খাওয়ার পাশাপাশি একটা বড় অংশ দিয়ে আবার মুরগির বাচ্চাও ফোটানো হয়। ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যানুসারে, দেশে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার চাহিদা ছিল সপ্তাহে গড়ে ১ কোটি ৩২ লাখ।