বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে শিল্পকারখানায় গ্যাস–সংযোগের জন্য রাস্তা কাটার অনুমতি পেতে তাঁকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল। এই ঘুষের টাকা পৌঁছে দিতেও এক ব্যক্তিকে ঘুষ দিতে হয়েছিল তাঁকে।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। ‘দেশের শিল্প খাতে জ্বালানি–সংকট সমাধানের পথ’ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন শেখ বশিরউদ্দীন। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রায় এক দশক ধরে দেশের শিল্পকারখানাগুলো তীব্র গ্যাস–সংকটে ভুগেছে। এ সময় বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস–সংযোগ দেওয়া বন্ধ ছিল, এখনো বন্ধ। পাশাপাশি ২০২০ সালে এক পরিপত্র জারি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জানায়, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পপার্কের বাইরের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নতুন গ্যাস–সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকবে।
গ্যাস–সংকট এখনো রয়েছে। আওয়ামী লীগ এই সংকটের কথা বলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে ২০১৮ সালে। গ্যাস আমদানি করতে গিয়ে এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে চাপ পড়ছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে নজর না দিয়ে আমদানি শুরু করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
গ্যাসের এমন সংকটের সময়ে যারা গ্যাস–সংযোগের অনুমতি পেয়েছিলেন, তাঁদেরও নানা কারণে ঘুষ দিতে হয়েছিল। এমন অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। সেমিনারে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে (গ্যাসের পাইপলাইন নির্মাণে) শুধু রোড কাটিং অনুমোদনের জন্য আমি ২০ কোটি টাকা (ঘুষ) দিয়েছি। আর এই ২০ কোটি টাকা দেওয়ার জন্যও আমি টাকা (ঘুষ) দিয়েছি।’
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘গ্যাসের জন্য জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর বাসার সামনে আমাকে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে অনেক লেকচার শুনতে হয়েছে। মিনিমাম ইজ্জত পর্যন্ত পাইনি। তারপরও জি স্যার, জি স্যার বলতে হয়েছে।’
তবে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি আর নেই বলে দাবি করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এখন আর কাউকে টাকা দিতে হবে না। আপনারা (ব্যবসায়ীরা) নিজেকে নিজে টাকা দিন। নিজের জন্য বিনিয়োগ করুন। সব কাজ সরকারের আশার ফেলে রাখার প্রয়োজন নেই।’