শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নল্ট এবার ২০ হাজার কোটি ডলার ক্লাবে

এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বার্নার্ড আর্নল্ট
ছবি: রয়টার্স

ফরাসি বিলাসপণ্যের কোম্পানি এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বার্নার্ড আর্নল্ট এখন ২০ হাজার কোটি ডলারের (২০০ বিলিয়ন) বেশি সম্পদের মালিক। বিশ্বের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি ২০০ বিলিয়ন সম্পদের ক্লাবে পৌঁছালেন। তাঁর আগে বিশ্বের অপর দুই ধনকুবের টেসলার ইলন মাস্ক ও আমাজনের জেফ বেজোস এ মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুসারে, গত মঙ্গলবার আর্নল্টের সম্পদ ২৪০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পায়। এতে আর্নল্টের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ হাজার ১০০ কোটি (২০১ বিলিয়ন) ডলার।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বের ধনীদের মধ্যে দিন দিন বিলাসপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে কয়েক মাস ধরে আর্নল্টের বিলাসপণ্যের কোম্পানির শেয়ারের দামেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এলভিএমএইচের শেয়ারের দাম ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই সময়ে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। তাতেই ২০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলকে পৌঁছান আর্নল্ট।

৭৪ বছর বয়সী বার্নার্ড আর্নল্ট বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিও। বর্তমানে তিনি বিশ্বের আরেক শীর্ষ ধনী ও টেসলার সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের চেয়ে ২ হাজার ৫০০ কোটি (২৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের বেশি সম্পদের অধিকারী।

বার্নার্ড আর্নল্টের আগে ইলন মাস্ক ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তবে গত বছর ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কেনা ও তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলার শেয়ারমূল্য ৫০ শতাংশ কমে যাওয়ায় মাস্কের সম্পদের পরিমাণ কমে যায়।

তবে ইলন মাস্কেরও আগে ২০০ বিলিয়ন ডলার সম্পদের ক্লাবে সবার আগে নাম লিখিয়েছিলেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। ২০২০ সালের আগস্টে তিনি প্রথম এ মাইলফলকে পৌঁছান। বর্তমানে ১২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার (১২৮ বিলিয়ন) সম্পদ নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছেন জেফ বেজোস।

বার্নার্ড আর্নল্ট বিলাসপণ্যের প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন। এলভিএমএইচের অধীন রয়েছে লুই ভুঁতো, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, মোয়ে ও শ্যান্ডন শ্যাম্পেনের মতো ব্র্যান্ড। বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন, জুয়েলারি আর অ্যালকোহলের যত বড় বড় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের নাম আপনি জানেন, তার প্রায় সব কটিরই মালিক তিনি।

গত তিন বছরে এলভিএমএইচের শেয়ারের দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বুধবার সকালে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৮৫৩ ইউরো হয়েছে। গত বছর এলভিএমএইচ রেকর্ড ৭ হাজার ৯২০ কোটি ইউরোর পণ্য বিক্রি করেছে। কেবল লুই ভুঁতো থেকেই আয় হয়েছে দুই হাজার কোটি ইউরোর বেশি। পাশাপাশি ১৫০ কোটি ইউরোর একটি শেয়ার বাইব্যাক প্রোগ্রাম শুরু করেছে এলভিএমএইচ, যা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম আরও বাড়াতে সাহায্য করেছে।

প্রায় ৩৫ বছর আগে এলভিএমএইচ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বার্নার্ড আর্নল্ট। বর্তমানে কোম্পানির অধিকাংশ শেয়ারের মালিক তিনি নিজেই। ব্যক্তিজীবনে দুবার বিয়ে করেছেন বার্নার্ড আর্নল্ট। পাঁচ সন্তানের বাবা তিনি। সম্প্রতি তাঁর সন্তানদেরও উত্তরাধিকার হিসেবে ব্যবসায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছেন এই শীর্ষ ধনী।

গত জানুয়ারিতে বড় সন্তান ডেলফাইনকে এলভিএমএইচের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্র্যান্ড ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেন আর্নল্ট। আর তাঁর ভাই আন্তোইনকে দেওয়া হয়েছে হোল্ডিং কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব।

অপর তিন সন্তানের মধ্যে আলেক্সান্ডার আর্নল্ট হলেন টিফানির একজন নির্বাহী, ফ্রেডেরিক আর্নল্ট ট্যাগ হিউয়ের প্রধান নির্বাহী, আর সবচেয়ে ছোট ছেলে জ্যঁ আর্নল্ট লুই ভুঁতোর ঘড়ি বিভাগের বিপণন ও পণ্য উন্নয়ন বিভাগের প্রধান।