‘আগে এক বস্তা খাদ্য কিনতাম ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দামে, মুরগির প্রতিটি বাচ্চা কিনতাম ১১ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে। এখন এক বস্তা খাবার কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। আর বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। যে কারণে খামারে এখন বেশি দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকেলে মুরগি আর ডিমের মূল্যবৃদ্ধিসহ এই খাত নিয়ে আলাপকালে গাজীপুরের ভাই ভাই পোলট্রি খামারের মালিক আবদুল হালিম কথাগুলো বলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আমরা খামার থেকে পাইকারিতে একেকটি মুরগি ৯৮ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতাম। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা দরে। আবার সেই মুরগি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা।’
অন্যদিকে জয়দেবপুর মুরগি বাজারের ব্যবসায়ী স্বাধীন মিয়া বলেন, ‘আমরা খামার থেকে ব্রয়লার মুরগি ক্রয় করছি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দামে। বিক্রি করছি ২২০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া সোনালি মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় কিনে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’
গাজীপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা উভয় ক্ষেত্রেই মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে গ্রাহক পর্যায়ে। ফলে বাজারে মুরগির ডিম বিক্রি কমে গেছে। মুরগি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, সামনে ডিম ও মুরগির দাম আরও বাড়বে।
মাসখানেক এ রকম উচ্চমূল্যেই স্থিতিশীল ছিল মুরগি ও ডিমের বাজার। কিন্তু আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের সাধারণ মানুষের পুষ্টির অন্যতম প্রধান এই দুটি পণ্যের দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া ডিমের ডজনপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। গতকাল গাজীপুরের জয়দেবপুর, চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া ও কোনাবাড়ী প্রভৃতি বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, বাজারে হঠাৎ করে মুরগি ও ডিমের দামে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ জন্য দোকানে দোকানে দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বাগ্বিতণ্ডাও হয়। গত সপ্তাহে যেখানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এখন ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের ডজনপ্রতি দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় উঠে গেছে। সোনালি মুরগির কেজি ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ থেকে ২৮৫ টাকা হয়েছে।
জয়দেবপুর কাঁচাবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, এক মাস আগেও বাজারে মুরগির দাম স্বাভাবিক ছিল। শীতের শেষ সময়ে পিকনিক ও বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠান বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগির চাহিদা বেড়েছে। এতেই দাম বেড়েছে মুরগির।
কোনাবাড়ী বাজারে ক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, ‘গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ টাকায় কিনেছি, এখন বলছে ২২০ টাকা। ডিমের দাম চাচ্ছে ৫০ টাকা হালি। অথচ আগে কিনেছি ৪০ টাকায়। আগের চেয়ে আয় কমেছে, অথচ ব্যয় বাড়ছে। এই রকম হইলে সংসার চলবে কেমনে।’
হঠাৎ ডিম ও মুরগির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি ফার্মার রক্ষা জাতীয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মহসিন বলেন, বর্তমানে চাহিদামতো খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, মুরগির খাদ্য উৎপাদনের কারখানাগুলো প্রতিনিয়ত বন্ধ হচ্ছে। এতে খাদ্য উৎপাদন কমেছে। সামনে মুরগি ও ডিমের দাম আরও বাড়বে। এলসি খোলা যাচ্ছে না, ব্যাংকে টাকা নেই, ডলারের সংকট। ডিম ও মুরগি উৎপাদনে ৮০ ভাগ খরচই হচ্ছে খাদ্যে। এই মুহূর্তে মুরগির খাদ্য নিয়ে ভয়াবহ সংকট চলছে। তবে রোজার সময় মূল্য কিছুটা কমতে পারে। কারণ, তখন বেচাবিক্রি এখনকার চেয়ে কিছুটা কমবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সারা বছরই বাজার কর্মকর্তার মাধ্যমে বাজার মনিটরিং করে থাকি। বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে। তারা ইচ্ছেমতো মূল্য বৃদ্ধি করতে পারে। তেমন কিছু হলে আমরা বাজারে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’