ভারতের কোম্পানির তৈরি কাশির সিরাপ খাওয়ার পর কিডনির সমস্যায় ভুগে আফ্রিকার দেশ দ্য গাম্বিয়ার ৭০ শিশুর মৃত্যু হয়। গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে ঘটা এ ঘটনার তদন্ত শেষে ভারতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে গাম্বিয়া সরকারের গঠিত একটি টাস্কফোর্স।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্টের গঠন করা একটি টাস্কফোর্স সম্প্রতি এ বিষয়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাতে ভারত সরকার, ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্থানীয় ওষুধ আমদানিকারক আটলান্টিক ফার্মাসির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
শিশুর মৃত্যুর জন্য ভারত থেকে আমদানি করা চারটি কফ সিরাপকে সরাসরি দায়ী করেছে টাস্কফোর্স। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো দ্বিধা ছাড়াই এই উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে ২০২২ সালের জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৭০টি শিশুর মৃত্যুর পেছনে চারটি কাশি ও সর্দির সিরাপের দায় ছিল।
ওই সব ওষুধে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে এমন ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। ভারতের মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে গাম্বিয়ার আটলান্টিক ফার্মাসি ওষুধগুলো আমদানি করে।
সুতরাং ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিকার চাওয়ার জন্য দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গাম্বিয়া সরকারকে প্রয়োজনীয় আইনি সম্ভাবনা খোঁজার পরামর্শ দিয়েছে টাস্কফোর্স। তারা বলেছে, ওই দুই প্রতিষ্ঠান ও ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছে, এসব ওষুধে ‘অগ্রহণযোগ্য’ মাত্রায় ডাইথিলিন গ্লাইকোল ও ইথিলিন গ্লাইকোল ছিল, যা সাধারণত মোটর যন্ত্রে ব্যবহার করা হয় এবং এটি খাওয়া হলে শরীরে গুরুতর বিষক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, এই বিষক্রিয়ায় কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
ভারত থেকে ওই সিরাপগুলো কোন প্রক্রিয়ায় আমদানি করা হয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখেছে গাম্বিয়ার টাস্কফোর্স। তারা দেখেছে, ওই সিরাপগুলো আমদানির ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শুরু করে সবকিছুতে ত্রুটি ছিল। এমনকি পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিকেল কন্ট্রোল এজেন্সিতে (এমসিএ) ওষুধগুলো নিবন্ধিতও ছিল না।
বর্তমানে একটি শীর্ষ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শ নিচ্ছে গাম্বিয়া।
এদিকে গাম্বিয়ায় শিশুদের ‘রহস্যজনক মৃত্যু’ তদন্তের জন্য ভারত সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তারা এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়। সেখানে ওষুধ ও মৃত্যুর মধ্যে কার্যকারণ স্থাপনের জন্য ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি কাশির সিরাপগুলোর নমুনাকে ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’ দিয়ে দ্রুত পরীক্ষা করা এবং রপ্তানি করতে নির্দেশনা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ।
গাম্বিয়া ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া ও উজবেকিস্তানে কফের সিরাপ খেয়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর পানামা, নাইজেরিয়া, ভারত ও হাইতিতে এই দূষিত সিরাপের উপস্থিতি চিহ্নিত হয়েছে।
বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বড় ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হলো ভারত। দেশটি আফ্রিকার মোট ওষুধের চাহিদার ৪৫ শতাংশ সরবরাহ করে। গত এক দশকে আফ্রিকায় ভারতীয় ওষুধ রপ্তানি দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু সম্প্রতি গাম্বিয়ার ঘটনার পর ভারতীয় ওষুধশিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।