চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মূলধনি মুনাফার ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। আজ রোববার সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে এক বৈঠকে এই দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে ডিএসইর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। বৈঠকে ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূলধনি মুনাফার ওপর যে করারোপ করা হয়েছে, তাতে ব্যক্তিশ্রেণির অনেক বড় বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে এ করহার ৪৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজারের বড় বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারে বিনিয়োগ ও নগদ লভ্যাংশ গ্রহণের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এসব বিনিয়োগকারীকে শেয়ারবাজারে সক্রিয় করতে হলে মূলধনি মুনাফার ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা উচিত, নয়তো যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত দুই পক্ষের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মূলধনি মুনাফার ক্ষেত্রে উচ্চ করহারের বিষয়টি এনবিআরের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্থ উপদেষ্টা দেশে ফিরলে এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলবে তারা। অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি পাওয়া গেলে মূলধনি মুনাফার ওপর থেকে কর কমানোর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে এনবিআর।
* ডিএসইর দাবি, মূলধনি মুনাফায় আরোপিত কর প্রত্যাহার, নয়তো যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা।* এনবিআর বলেছে, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনি মুনাফা করমুক্ত রাখা হয়েছে। তবে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করলে তার ওপর কর বসানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে এমন কোনো বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছেন। সে ক্ষেত্রে মুনাফার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত-সুবিধার আওতায় থাকবে। বাকি ৫ লাখ টাকার মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। তাতে ওই বিনিয়োগকারীকে নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরের মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে। তবে কোনো বিনিয়োগকারী যদি কোনো শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করেন, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।
আলাপকালে ডিএসইর একাধিক পরিচালক প্রথম আলোকে জানান, শেয়ারবাজারে এমন কিছু বড় বিনিয়োগকারী রয়েছেন, বর্তমান আইনে যাঁরা সর্বোচ্চ হারে কর দেন। এসব বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেন। তাঁরা যদি ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফা করেন, সেই মুনাফা তাঁদের আয়ে যুক্ত হয়। এসব বিনিয়োগকারী যদি আবার সম্পদ করের আওতাভুক্ত হন, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাঁদের ওপর করহার বেড়ে ৪০ শতাংশের বেশি দাঁড়ায়। এ কারণে দেখা যাচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারীরা এখন তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ গ্রহণের বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার পরও ভালো মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ারের দর কমছে। এ কারণে মূলধনি মুনাফার ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
মূলধনি মুনাফার কর ছাড়াও লেনদেনের ওপর উৎসে কর কমানো, লভ্যাংশের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহারেরও দাবি জানান ডিএসইর পরিচালকেরা। এসব দাবি আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
মূলধনি মুনাফার ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের আশ্বাসের বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ডিএসইর পরিচালকদের জানিয়েছি, অর্থ উপদেষ্টা দেশে ফিরলে বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মূলধনি মুনাফাসহ লেনদেনের উৎসে কর, লভ্যাংশের ক্ষেত্রে প্রদত্ত করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে নিষ্পত্তিসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছি। এনবিআরের পক্ষ থেকে আমাদের প্রস্তাবগুলো ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। মূলধনি মুনাফার করের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে এনবিআরের দিক থেকে কিছু নীতি সহায়তা পাওয়া গেলে তা শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়ক হবে।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য এ কে এম বদরুল আলম, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক আহসান হাবীব, ডিএসইর পরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, শাকিল রিজভী, রিচার্ড ডি রোজারিও, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাত্বিক আহমেদ প্রমুখ।