দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরেছে। ফলে গত সাত দিনে পৌনে ছয় হাজার নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হয়েছেন। পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদেরও অনেকে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। গত তিন কার্যদিবসে প্রায় ছয় হাজার বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় হয়েছেন।
শেয়ারবাজারের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিনে শেয়ারবাজারে নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে ৫ হাজার ৬৪৭টি। আর তিন কার্যদিবসে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবগুলোর মধ্য থেকে ৫ হাজার ৯৭৮টি সক্রিয় হয়েছে। ১১ আগস্ট শেয়ারবাজারে শেয়ার আছে এমন সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৪। ১৪ আগস্ট লেনদেন শেষে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯৪ হাজার ২৭২। নিষ্ক্রিয় বিও হিসাব সক্রিয় হতে শুরু করায় শেয়ারবাজারে শেয়ারশূন্য অর্থাৎ শেয়ার নেই এমন বিও হিসাবের সংখ্যা কমছে।
সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ১১ আগস্ট বাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৩। ১৪ আগস্ট এই সংখ্যা কমে হয় ৩ লাখ ১৪ হাজার ১৭৬। সেই হিসাবে তিন কার্যদিবসে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ হাজার ৩৪৭।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর টানা কয়েক দিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান ঘটে। ৬ আগস্ট থেকে গতকাল ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সাত কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৭৮ পয়েন্ট বা প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। এই সাত দিনের মধ্যে চার দিনই সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। আর সূচক কমেছে তিন দিন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের আশার সঞ্চার হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এত দিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছিল; তাই বাজারমুখী হননি অনেকে।—মোহাম্মদ মূসা, অধ্যাপক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, সূচক টানা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বেশি সক্রিয় হয়েছেন। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও বাড়তে শুরু করেছে। কারণ, কয়েক বছর ধরে বাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারগুলো অবমূল্যায়িত অবস্থায় ছিল। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব শেয়ার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাতে বাজারের প্রতি ব্যক্তিশ্রেণির ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মূসা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের আশার সঞ্চার হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এত দিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছিল; তাই বাজারমুখী হননি অনেকে।
মোহাম্মদ মূসা আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে নতুন বেশকিছু সংস্কার হবে এবং সুফল মিলবে বাজারে, এমন আশায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে যেসব সংকট রয়েছে, সেগুলো শিগগিরই দূর হবে না। তাই কিছু সমস্যা থাকলেও বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হওয়ায় বাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী ধারা কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে আমার ধারণা।’
ঢাকার বাজারে আজ বৃহস্পতিবারও মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মধ্যে ছিল গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার ও স্কয়ার ফার্মা। এ পাঁচ কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের এক-চতুর্থাংশ। এর মধ্যে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও স্কয়ার ফার্মা ছাড়া বাকি তিনটির দাম কমেছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক দিন গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক ও ইউনিলিভার কনজ্যুমারের শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ অবস্থায় সপ্তাহের শেষ দিনে আজ অনেক বিনিয়োগকারী এসব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে কিছু মুনাফা তুলে নেন। এ কারণে এগুলোর মূল্য কিছুটা সংশোধন হয়েছে।
ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ ৪৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯০৪ পয়েন্টে নেমেছে। ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের মূল্য সংশোধনের ফলে সূচকের এ পতন হয়েছে বলে জানান বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একই কারণে লেনদেনও কিছুটা কমে গেছে। ঢাকার বাজারে আজ বৃহস্পতিবার ৯৯৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ২৪৫ কোটি টাকা বা ২০ শতাংশ কম।
এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ এখন পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি। জানা গেছে, আগামী সপ্তাহেই তিনি যোগ দেবেন। নতুন চেয়ারম্যান যোগ দেওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বাজার উন্নয়নে নতুন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, এ আশাও তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের সহযোগী তিনটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, নতুন চেয়ারম্যান বাজারে কারসাজি ও অনিয়ম রোধে সক্রিয় হলে তাতে বাজারে নতুন করে গতির সঞ্চার হবে। দেশি-বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবেন বাজারে।