দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) আইন অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালকের নামের তালিকা তৈরি করে নমিনেশন ও রেমুনারেশন কমিটি। এ কমিটির নেতৃত্বে থাকেন একজন স্বতন্ত্র পরিচালক। কমিটির পক্ষ থেকে ৭ স্বতন্ত্র পরিচালকের জন্য ন্যূনতম ১৪ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়।
কমিটির প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক বাছাই করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এদিকে নতুন পর্ষদ গঠনের আগেই দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালকদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। গত মঙ্গলবার বিএসইসির পক্ষ থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। মৌখিক ওই নির্দেশনার ভিত্তিতে গতকাল বুধবার পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন দুই স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালকেরা। এ নিয়ে তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন পর্ষদ তাহলে কীভাবে গঠিত হবে?
ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ ১৩ সদস্যের। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক মোট সাতজন। এর বাইরে সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন চারজন শেয়ারধারী পরিচালক, কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন একজন পরিচালক। আর সংস্থাটির এমডি পদাধিকারবলে পর্ষদের সদস্য।
ডিএসইর সাত স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে চেয়ারম্যান হাফিজ মো. হাসান বাবু এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। বাকি ছয় স্বতন্ত্র পরিচালকের বেশির ভাগই গতকাল পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। একই পরিস্থিতি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। স্বতন্ত্র পরিচালকদের পদত্যাগের মধ্য দিয়েই মূলত দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কারণ, স্বতন্ত্র পরিচালকেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এ অবস্থায় নতুন পর্ষদ কীভাবে গঠিত হবে, জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা শেয়ারধারী পরিচালকেরা বৃহস্পতিবার (আজ) স্টক এক্সচেঞ্জের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করব। বর্তমানে পর্ষদে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেটি দূর করার কর্মপন্থা নিয়েই নিজেদের মধ্যে এ আলোচনা করা হবে।’
এ নিয়ে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশনসহ স্টক এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও বিধিবিধান পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসইতে সরাসরি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সুযোগ নেই। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ সমস্যার সমাধানও জরুরি। তাই কীভাবে বিষয়টির সুরাহা করা যায়, তা ডিএসইর অন্য পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দেশে এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী অনেক বিষয়ের সমাধান করা যাবে না। তাই ডিএসইর পর্ষদ পুনর্গঠনে বিএসইসির উচিত হবে স্টক এক্সচেঞ্জের বিদ্যমান পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে বিষয়টির সমাধান করা। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তবে যে প্রক্রিয়ায় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার বিষয়ে সৎ, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও নিষ্ঠাবান লোকদেরই নিয়োগ দিতে হবে।
২০১০ সালের শেয়ারবাজারে ধসের পর খ্যাতনামা ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ডিএসই ও সিএসই ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এর পর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালিত হয়ে আসছে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নেতৃত্বে।