সরকারি বন্ডের লেনদেন আগামী সপ্তাহে

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আয়োজিত বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। পাশাপাশি পুঁজিবাজারকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার

সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড লেনদেন আগামী সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, বন্ড বাজারের উন্নয়ন হলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমবে, পুঁজিবাজারেরও উন্নয়ন হবে। গতকাল সোমবার বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ বিনিয়োগকারী সপ্তাহের আয়োজন করে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সেই উপলক্ষে প্রথমবারের মতো গভর্নর হিসেবে বিএসইসির কার্যালয়ে যান আব্দুর রউফ তালুকদার।

এর আগে কোনো গভর্নর বিএসইসি কার্যালয়ে যাননি। ফলে বিএসইসি কার্যালয়ে গভর্নরের উপস্থিতি নিয়ে কয়েক দিন ধরেই শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্টদের মনে একধরনের উচ্ছ্বাস বিরাজ করছিল।

এমন এক পরিস্থিতি গতকাল বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘অনেকে জানতে চান, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কী হওয়া উচিত। আমি বলি, এ নিয়ে আলোচনার দরকার কী। পুঁজিবাজারকে সহায়তা করা আমাদের কাজ, সেটি আমরা করছি। ভবিষ্যতেও করে যাব।’

গভর্নর আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজার বলতে আমরা শুধু মূলধনি (ইকুইটি) বাজারকেই বুঝি। কারণ, আমাদের এখানে বন্ড বাজার তৈরি হয়নি। তাই আমরা বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে দেখলাম এক ব্যাংকের বন্ড শুধু অন্য ব্যাংক কিনছে। আমি সেটি পরিবর্তন করে নিয়ম করেছি, ব্যাংকের বন্ডের ৫০ শতাংশ ব্যাংকের বাইরে বিক্রি করতে হবে। কারণ, ব্যাংকের বন্ড অত্যন্ত নিরাপদ। অতীতে কোনো ব্যাংক বন্ডের সুদ বা টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়নি। আগামী ৫০ বছরেও হবে না।’

গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। আর এ ঋণ খেলাপি হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে। অথচ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ব্যাংকের দেওয়ার কথা নয়, ব্যাংক দেবে উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধন ঋণ। আর উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করবে পুঁজিবাজার বা বন্ড বাজার।

কিন্তু আমাদের দেশে সেটি হচ্ছে না। তাই দেশের মানুষ ও উদ্যোক্তাদের কীভাবে শেয়ারবাজারমুখী করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করছি।’ একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ জানান, বন্ডে ব্যাংকের বিনিয়োগকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখা হবে।

সে জন্য কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস খুবই জরুরি। আমরা দেখেছি ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ঘটনায় মানুষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাই মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়াতে হলে পুঁজিবাজারের গলদগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো নিরসনে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সর্বজনীন পেনশন তহবিল গঠিত হলে সেখান থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। এভাবে ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে।  

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান আইওএসসিওর আহ্বানে ৩-১০ অক্টোবর ষষ্ঠবারের মতো বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

এ সময় তিনি বলেন, যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো, যার সুফল পুঁজিবাজার পাচ্ছে।

এ সময় তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ভালো হলে ব্যাংক খাতেরই লাভ। কারণ, দিন শেষে পুঁজিবাজারের সব টাকা ব্যাংকেই জমা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। আর অনলাইনে যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফেয়ার কানাডার নির্বাহী পরিচালক জিন পল ব্রুরেয়ড। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে প্যানেল আলোচনায় বিএসইসি, ডিবিএ, বিএমবিএসহ পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ অংশ নেয়।