এত দিন ব্যাংকগুলোকে ২ শতাংশ হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হতো। এখন থেকে রাখতে হবে ১ শতাংশ।
দেশের শেয়ারবাজারের জন্য নতুন করে আরও একটি নীতি ছাড় সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নীতি ছাড়ের খবরে গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের শেয়ারবাজারেও কিছুটা গতি ফিরেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক ও লেনদেন উভয়ই বেড়েছে এদিন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের যে ঋণ দিত, তার বিপরীতে এত দিন ২ শতাংশ হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং রাখতে হতো। এখন থেকে ২ শতাংশের বদলে ১ শতাংশ প্রভিশনিং রাখতে হবে ব্যাংকগুলোকে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
ব্যাংক ও শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতি ছাড়ের ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, শেয়ারবাজারে ঋণ দিয়ে এখন তাদের আগের চেয়ে অর্ধেক প্রভিশনিং করতে হবে। পাশাপাশি এ ছাড়ের কারণে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি ঋণ দিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকেরই নিজস্ব সহযোগী ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে।
সাধারণত ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলার প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরাসরি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। আবার অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকগুলো যে ঋণ দেয়, তার বিপরীতে বছর শেষে ঋণদাতা ব্যাংককে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়। এখন সেখানে ছাড় পেয়েছে ব্যাংকগুলো।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের সহযোগী এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতি সহায়তা দিয়েছে, তাতে হয়তো আর্থিকভাবে ব্যাংকগুলোর বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ, কোনো ব্যাংক যদি কোনো ব্রোকারেজ হাউসকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিত, তাহলে ওই ব্যাংককে এত দিন সেই ঋণের বিপরীতে ২ শতাংশ তথা ১০ কোটি টাকা প্রভিশনিং করতে হতো। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ৫ কোটি টাকা কম প্রভিশনিং করতে হবে। এটি ব্যাংকের জন্য সে অর্থে বড় কোনো অর্থ নয়।
ব্রোকারেজ হাউসটির ওই নির্বাহীর মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতি ছাড়ের সবচেয়ে বড় প্রভাব যেটি তা হলো শেয়ারবাজার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক মনোভাব। এত দিন শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টদের চাওয়াগুলো বছরের পর বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তেমন কোনো গুরুত্ব পেত না। এখন সেই মনোভাবের বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। শেয়ারবাজারের দাবিদাওয়াগুলো একে একে পূরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারের জন্যই এটি বড় ইতিবাচক বার্তা।
এ কারণে নীতি ছাড়ের উদ্যোগটি বাজারে গতি ফেরাতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারই তাৎক্ষণিক প্রভাব দেখা গেছে গতকালের বাজারে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন প্রায় ১৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৯৫ পয়েন্টে। আর দিন শেষে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮৭ কোটি টাকায়।
গত ১২ জুলাই নতুন গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদার যোগ দিয়ে আগস্টে প্রথম শেয়ারবাজারের জন্য বড় ধরনের নীতি ছাড় দেন। এতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের হিসাব শেয়ারের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে করার সুবিধা দেওয়া হয়। এখন শেয়ারবাজারে দেওয়া ব্যাংকের ঋণের প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রেও নীতি ছাড় দেওয়া হলো।