চলতি বছর ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হলে জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান নিজেই মনে করেন, দেশের এই প্রধান শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা দুটি। একটি হচ্ছে আস্থার অভাব, অন্যটি সুশাসনের অভাব।
তিনি বলেন, এ দুই সমস্যা থাকলে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হওয়া কঠিন। ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পুঁজিবাজারের অবদান ৮০ শতাংশ, অথচ বাংলাদেশে তা ১৬–১৭ শতাংশ বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, অ–তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান আগে ১০ শতাংশ থাকলেও এখন ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এই পার্থক্য কমপক্ষে ১৫ শতাংশ থাকা উচিত। এর মাধ্যমে ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
প্রকৃত বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা এ বাজার থেকে অর্থ তুলছেন না। কেউ আসছেন ব্যবসা সম্প্রসারণের অর্থ তুলতে, কেউবা আসছেন চলতি মূলধন নিতে।ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসি
এমন হতাশাজনক বক্তব্য শুনে পাল্টা আশাবাদের কথা শোনান পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলতি বছরে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হলে জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
গতকাল শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে শেয়ারবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) যৌথ আয়োজনে এক গোলটেবিল বৈঠকে তাঁরা এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এই বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ও শর্ট সেলিং শুরুর সুবাদে দেশের শেয়ারবাজার শিগগিরই অনেক বড় হবে। এর মধ্যে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হবে চলতি বছরে। বাকি দুটি এখন প্রক্রিয়াধীন।
সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান। আলোচকেরা দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিবর্তে পুঁজিবাজারকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বলেন, ‘ওঠানামা সব দেশের পুঁজিবাজারের ধর্ম। আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ বাজারের অবদান কম থাকার কারণ হচ্ছে শিল্পের অর্থায়নে ব্যাংকমুখিনতা। দরকার হচ্ছে পুঁজিবাজারমুখিনতা করা। শিল্পের জন্য সহজে ব্যাংকঋণ পাওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে।’
বিএসইসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, প্রকৃত বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা এ বাজার থেকে অর্থ তুলছেন না। কেউ আসছেন ব্যবসা সম্প্রসারণের অর্থ তুলতে, কেউবা আসছেন চলতি মূলধন নিতে। আর আমদানিনির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কতটুকু কার্যকর হতে পারে, সেটাও একটা প্রশ্ন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, রুগ্ণ কোম্পানি দিয়ে চলছে শেয়ারবাজার। নেস্লে, ইউনিলিভারের মতো কোম্পানিগুলো আসছে না। অথচ বাংলাদেশে ব্যবসা করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে এ বাজারের অবস্থান অনেক ওপরে থাকার কথা। কিন্তু নেই। কারণ, বাজারে চাহিদা নেই। কম মূল্যের একটি শেয়ার আমি কিনব কি কিনব না, ভেবে বিনিয়োগকারী যখন দ্বিধান্বিত, তখন সেই শেয়ারের দাম ৪০০ টাকার বেশি।’ তিনি প্রশ্ন করেন, এ ব্যাপারে বিএসইসির কি কিছুই করণীয় নেই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. জাহিদ হাসান প্রমুখ।