শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেনে বড় ভরসা এখন ‘ব্লক মার্কেট’। কারণ, মূল বাজারে ভালো মৌলভিত্তির বেশির ভাগ শেয়ারই এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়ায় শেয়ারের তেমন কোনো লেনদেন হচ্ছে না।
এ কারণে এখন এসব কোম্পানির বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেন ব্লক মার্কেটকে বেছে নিচ্ছেন বড় বিনিয়োগকারীরা। তাতে হঠাৎ হঠাৎ ব্লক মার্কেটে বড় কিছু কোম্পানির বড় অঙ্কের শেয়ারের হাতবদলের ঘটনা ঘটছে। তেমনি ঘটনা ঘটেছে গতকাল সোমবার।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ব্লক মার্কেটে তিন কোম্পানিরই ৪২ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে বেক্সিমকো লিমিটেড, রেনেটা লিমিটেড ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স। এর মধ্যে বেক্সিমকো ও রেনেটার ১৫ কোটি টাকা করে ৩০ কোটি এবং আইপিডিসির প্রায় ১২ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ব্লক মার্কেটে গতকাল বেক্সিমকোর ১৩ লাখ, রেনেটার সোয়া ১ লাখ এবং আইপিডিসির ২০ লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়। অথচ মূল মার্কেটে গতকাল বেক্সিমকোর ৬ হাজার ৬০১টি, রেনেটার ২১৪টি এবং ৩৫টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
মূল বাজারে বেশ কিছুদিন ধরেই এ তিন কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। ফলে এসব শেয়ারের ক্রেতাসংকট দেখা দিয়েছে মূল বাজারে।
বেক্সিমকো, রেনেটা ও আইপিডিসি ছাড়াও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দাম বর্তমানে ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। তাই কোম্পানির হাতে গোনা কিছু শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে বাজারে। এতে বাজারের লেনদেন নেমেছে তলানিতে।
সাধারণ বাজারের তুলনায় ব্লক মার্কেটের লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। মূল বাজারে শেয়ারের ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ কাউকে চেনেন না। ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমেই এ দুই পক্ষের মধ্যে লেনদেন হয়। আর ব্লক মার্কেটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতা-বিক্রেতা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। এমনকি দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে শেয়ারের দামও আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়। শুধু ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে লেনদেন করে শেয়ারের হাতবদল করা হয়। এ ব্যবস্থাটির মাধ্যমে মূলত বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেন করা হয়। বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেনের ফলে মূল বাজারের শেয়ারের দামে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে, সে জন্যই এ ব্লক মার্কেটকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এদিকে বাজারে মন্দাভাব থাকায় এখনই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে না পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যদিও বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজারে লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই কেউ কেউ ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়ে বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলছেন। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির আশঙ্কায় এখনই সে পথে হাঁটতে নারাজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তার বদলে প্রতিষ্ঠানটি ব্লক মার্কেটে বেশি শেয়ার লেনদেনকে উৎসাহিত করছে।
ব্লক মার্কেটে যাতে বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেন হয়, সে জন্য বিএসইসি ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কম দামে শেয়ার লেনদেনের সুযোগ দিয়েছে। সম্প্রতি এ সুবিধা দেওয়া হয়। আর এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেনে ব্লক মার্কেটকে বেছে নিয়েছেন। আর তাতে ব্লক মার্কেটে লেনদেনে কিছুটা গতি সঞ্চার হয়েছে।
ঢাকার বাজারে গতকাল ব্লক মার্কেটে ৫১টি কোম্পানির শেয়ারের হাতবদল হয়। দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মূল বাজারের লেনদেনের প্রায় ১৫ শতাংশ। ব্লক মার্কেটের ৬৪ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে ৪২ কোটি টাকাই ছিল চার কোম্পানির।