ডিএসই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালকেরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে
ডিএসই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালকেরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে

শেয়ারবাজারের ১৫ বছরের অনিয়ম খুঁজতে কমিটি চান ডিএসইর নেতারা

গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে যেসব অন্যায়, অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো খুঁজে বের করতে একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউসের মালিকেরা বলছেন, ‘এসব অনিয়ম–জালিয়াতির ঘটনায় কার কতটা শাস্তি হবে, তা আমরা জানি না। কারও শাস্তি হোক বা না হোক বাজারের ভবিষ্যতের প্রয়োজনে অনিয়মগুলো খুঁজে বের করে নথিভুক্ত করা দরকার। আমরা সবাই জানতে চাই কোথায় কোথায় কী কী অনিয়ম ও অন্যায় হয়েছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলামের সঙ্গে একই সুরে কথা বলেন ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে যেসব কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে, সেগুলোর ওপর একটি বিশ্লেষণ দরকার। এসব আইপিও কার স্বার্থে কেন তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, সেটি জানা দরকার।

একই অনুষ্ঠানে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নানা অনিয়ম ও ব্যর্থতার কারণে গত ১৫ বছরে আমাদের শেয়ারবাজারের অবস্থা এতই নাজুক হয়েছে যে দৈনিক গড় লেনদেনের দিক থেকে আমরা শ্রীলঙ্কার চেয়েও অনেক পিছিয়ে গেছি। এ সময় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। সেই অবস্থা থেকে বাজারকে দ্রুত একটি ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনার মতো সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর চেয়ারম্যান আরও বলেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুর্বল মানের কোম্পানি কারসাজির বড় হাতিয়ার। আবার দুর্বল কোম্পানি তালিকাচ্যুত করার আইনি ব্যবস্থাও দুর্বল। ফলে বন্ধ কোম্পানির শেয়ারও এই বাজারে চড়া দামে কেনাবেচা হয়। এ কারণে শেয়ারবাজারে বহুজাতিক কোম্পানিসহ ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে ডিএসইর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।

ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভালো কোম্পানি বাজারে আনার পাশাপাশি শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ভবিষ্যতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে ডিএসই। এ জন্য পদ্ধতিগত সংস্কারের পাশাপাশি বাজারের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ডিএসইর বর্তমান পর্ষদ বাজারের স্বার্থে কয়েকটি বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করেছে। তার মধ্যে রয়েছে ভালো কোম্পানি বাজারে আনা, করপোরেট বন্ড বাজারকে আরও বিস্তৃত করা, মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে বাজারে সক্রিয় করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত ডিএসই পর্ষদের এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ডিএসইর চেয়ারম্যান সার্বিক বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। উপস্থাপনায় বলা হয়, গত ১০ বছরে গড়ে প্রতিবছর প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির বেশির ভাগই ছিল দুর্বল মানের। তার বিপরীতে উল্লিখিত সময়ে বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। তার বাইরে সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে আরও বেশি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনীতিকরণ, অনিয়ম ও ব্যর্থতার কারণে শেয়ারবাজারের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। এ কারণে গত ১০ বছরে দৈনিক গড় লেনদেনের ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কার চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার।

ডিএসইর চেয়ারম্যান তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিগত সময়ে দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সূচক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, নানা অনিয়ম ও কারসাজি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারবিমুখ করেছে। বিশেষ করে ফ্লোর প্রাইসের মতো ব্যবস্থা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ডিএসই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালকেরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে

সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, ‘শেয়ারবাজারে গত ১৫ বছরে যেসব অন্যায়, অনিয়ম ও জালিয়াতি হয়েছে, তা খুঁজে বের করা দরকার ভবিষ্যতের প্রয়োজনে। এ জন্য একটি তথ্য অনুসন্ধান (ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং) কমিটি করা দরকার। আমরা সবাই জানতে চাই, কোথায় কোথায় কী কী অনিয়ম ও অন্যায় হয়েছে।’ একই সঙ্গে তিনি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুর্বল ও বন্ধ কোম্পানি তালিকাচ্যুত করতে দ্রুত তালিকাচ্যুতি (ডিলিস্টিং) নীতিমালা প্রণয়নেরও দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গঠন করা হয়েছিল। এ জন্য কমিশনকে বিপুল আইনি ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি আমরা দেখছি, শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মন্ত্রণালয়নির্ভর হয়ে পড়ছে। এটি আমাদের কারও কাম্য নয়। আশা করি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএসইসি তার পূর্ণাঙ্গ আইনি ক্ষমতা ব্যবহারে সচেষ্ট থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমবিএর সভাপতি মাজেদা খাতুন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) কামরুল ইসলাম, শাকিল রিজভী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিচার্ড ডি রোজারিও, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ প্রমুখ।