শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজার

সূচকের বড় উত্থান অব্যাহত, বেড়েছে লেনদেন

মূলধনি মুনাফার কর কমানোর খবরে আজ মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১১৩ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে। গত প্রায় এক মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টের সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল।

সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও বড় উত্থান হয়েছে এদিন। ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪০ কোটি টাকায়। তাতে আগের দিনের চেয়ে লেনদেন ২৭৫ কোটি টাকা বা ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, গত দুই মাসের ব্যবধানে আজ ঢাকার বাজারের লেনদেন আবারও সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এর আগে সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ১ হাজার ৬৬ কোটি টাকার সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে মূলধনি মুনাফার ওপর প্রযোজ্য করহার কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবকালে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ক্ষেত্রে করারোপ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কর প্রস্তাব করা হয় সংশ্লিষ্ট করদাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সর্বোচ্চ করহার। অর্থাৎ কোনো করদাতা যদি ৩৫ শতাংশ হারে করের আওতায় পড়েন তাহলে ওই করদাতা শেয়ারবাজার থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফা করলে সেই মুনাফার ওপর একই হারে কর দিতে হবে। যেসব করদাতা উচ্চ সম্পদশালী, তাঁদের ওই সম্পদের ওপর সারচার্জ দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে সম্পদশালী করদাতার ক্ষেত্রে মূলধনি মুনাফার ওপর করহার পড়ে ৪০ শতাংশের বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে মূলধনি মুনাফার কর কমানোর দাবি করা হয়। গত সপ্তাহে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে এক বৈঠকে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। ডিএসই ও ডিবিএর এই দাবির পক্ষে অবস্থান ছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সংস্থাটির পক্ষ থেকে স্বল্পমেয়াদি যেসব পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়, তার মধ্যে মূলধনি মুনাফার কর কমানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। গত বুধবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিএসইসি কার্যালয় পরিদর্শনে গেলে সেখানে এ দাবির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার এনবিআরের পক্ষ থেকে মূলধনি মুনাফায় কর কমানোর আদেশ জারি করা হয়।

* ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ৩৮ পয়েন্ট। * লেনদেনের শীর্ষে স্কয়ার ফার্মা, মোট লেনদেনের ৪ শতাংশই ছিল কোম্পানিটির। * দুই মাসের ব্যবধানে আবারও সর্বোচ্চ লেনদেন ডিএসইতে।

মূলধনি মুনাফার কর কমানোর তাৎক্ষণিক প্রভাবে সোমবার দুপুরের পর সূচক ও লেনদেন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তাতে ওই দিন লেনদেন পৌঁছেছিল প্রায় পৌনে ৬০০ কোটি টাকায়। মঙ্গলবারও দিনের শুরু থেকে সেই রেশই ছিল। লেনদেনের শুরু থেকেই বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে লেনদেনেও ছিল ভালো গতি। ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৯৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০৪টি বা ৭৬ শতাংশেরই দাম বেড়েছে। দাম কমেছে ৬৫টি বা ১৬ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির বা ৮ শতাংশের।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে বিএসইসি। সেসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। যার বহিঃপ্রকাশ বাজারে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, বাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে ঘোষিত পদক্ষেপগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা যাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথার ওপর আস্থা রেখে কোনোভাবে প্রতারিত না হন, সেটি নিশ্চিত করলে বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারমুখী হবেন।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, মূলধনি মুনাফার কর কমানোর খবরে আজ বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের হতাশা কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা হলে তাহলে বাজার দীর্ঘমেয়াদি টেকসই হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ থেকে অনেক দাবি ও করণীয় সম্পর্কে মতামত উঠে এসেছে। সেগুলোর ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা ফিরে পাবেন।

এদিকে শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের বড় উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ইসলামী ব্যাংকের। আজ ব্যাংকটির শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ বা ৫ টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে ৩৮ পয়েন্ট। এ ছাড়া সূচকের উত্থানে আরও ভূমিকা রেখেছে স্কয়ার ফার্মা, রেনাটা, বীকন ফার্মা ও বেস্ট হোল্ডিংস। এই চার কোম্পানির সম্মিলিত মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে উল্লিখিত পাঁচ কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি সাড়ে ৫৫ পয়েন্ট বেড়েছে।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, একমি ল্যাবরেটরিজ, লিনডে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বা বিএসসি ও ইসলামী ব্যাংক। এই পাঁচ কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১২৮ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশ।