অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লভ্যাংশ ও মুনাফার তথ্য জানায় গতকাল। তাতে কোম্পানিটির পাশাপাশি অ্যাপেক্স নামের বাকি ৩ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে।
দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল নামের মিলের কারণে চারটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। সচরাচর শেয়ারবাজারে এ ধরনের ঘটনা খুব বেশি দেখা যায় না। তালিকাভুক্ত যে চারটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, তাদের সবার নামের সঙ্গেই অ্যাপেক্স শব্দটি রয়েছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অ্যাপেক্স নামে চারটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। কোম্পানিগুলো হলো অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, অ্যাপেক্স ট্যানারি, অ্যাপেক্স ফুডস ও অ্যাপেক্স স্পিনিং।
এই চার কোম্পানির মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করে ও লভ্যাংশের ঘোষণা দেয়। সেই খবরে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত অ্যাপেক্স নামের অন্য তিন কোম্পানির শেয়ারেরও দাম বেড়ে যায়।
চার কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে অ্যাপেক্স ফুডসের। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম এক দিনেই ৯ শতাংশ বা ৩৪ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২৭ টাকায়। এরপর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল যথাক্রমে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, অ্যাপেক্স স্পিনিং ও অ্যাপেক্স ট্যানারির। এ তিন কোম্পানির মধ্যে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ বা ১২ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৮ টাকায়, অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের দাম ৪ শতাংশ বা প্রায় ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩৩ টাকা এবং অ্যাপেক্স ট্যানারির দাম ৩ শতাংশ বা প্রায় ৩ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৮ টাকায়। ডিএসইতে গতকাল মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে ছিল অ্যাপেক্স ফুডস ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। পাশাপাশি লেনদেনেরও শীর্ষ দশে ছিল এ দুই কোম্পানি।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘অতীতে আমরা কয়েকবার দেখেছি একই গ্রুপের কোম্পানির ক্ষেত্রে একটির ঘোষণায় অন্যগুলোরও দাম বেড়েছে। তবে সেই মূল্যবৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয় না। এপেক্সের ক্ষেত্রেও গতকাল একই ধরনের ঘটনা দেখলাম। এর মধ্যে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে লভ্যাংশ ও মুনাফা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। অন্য তিনটির ক্ষেত্রে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। তাই সেগুলোর মূল্যবৃদ্ধি স্থায়ী হবে কি না, পরবর্তী কার্যদিবসগুলোতে বোঝা যাবে।
শেয়ারবাজারে অ্যাপেক্স নামের চার কোম্পানির বিষয়ে শাকিল রিজভী বলেন, এখন এ চার কোম্পানির মূল মালিকানায় যাঁরা রয়েছেন, একসময় তাঁরা সবাই মিলে অ্যাপেক্স গ্রুপের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। পরে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, এ কে এম রহমতউল্লাহ, জাফর আহমেদ ও জহুর আহমেদের মধ্যে সেই ব্যবসা ভাগাভাগি হয়। ভাগাভাগির পর অ্যাপেক্স নামের সব কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার দেশীয় মালিকানাধীন জুতা তৈরি ও বাজারজাতকারী শীর্ষস্থানীয় একটি কোম্পানি। গত সোমবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২২–২৩ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন ও একই বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে। গত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির কর–পরবর্তী মুনাফা বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানিটি আগের বছরের মতো শেয়ারধারীদের জন্য ৪৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ৩৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানানোর ফলে কোম্পানিটির শেয়ারে আগ্রহ বেড়ে যায় বিনিয়োগকারীদের। এতে শেয়ারের দাম ও লেনদেনও বাড়ে। ডিএসইতে বুধবার কোম্পানিটির প্রায় ১৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়।
মুনাফা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘২০২২–২৩ অর্থবছরে আমরা দুটি ঈদ পেয়েছি। উৎসবকেন্দ্রিক বিক্রির সুফল পেয়েছি আমরা। এ ছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানিতে পণ্যের ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সুফলও পেয়েছি। সব মিলিয়ে তাই মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে।’