শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

শিবলীর পদত্যাগের পরও সূচক ও লেনদেনের বড় উত্থান

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় দুই বছরের মধ্যে লেনদেন আবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার ঢাকার বাজারে ২ হাজার ১০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। প্রায় দুই বছর পর এটিই ঢাকার বাজারের সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ২ হাজার ৮৩২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ লেনদেন যেমন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, তেমনি ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছাড়িয়েছে ৬ হাজার পয়েন্ট। ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৯১ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৬ পয়েন্টে। গত পাঁচ মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ১১ মার্চ ডিএসইএক্স সূচকটি ৬ হাজার ৫৮ পয়েন্টের সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল।

ঢাকার বাজারে আজ রোববারও লেনদেন শুরু হয় সূচকের বড় উত্থান দিয়ে। প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যেই ডিএসইএক্স সূচকটি ২৯১ বেড়ে ৬ হাজার ২১৮ পয়েন্টে। পরে শেয়ার বিক্রির চাপে সূচকটি কমে যায়। একপর্যায়ে ডিএসইএক্স সূচকটি আগের দিনের চেয়ে ৫০ পয়েন্ট কমে যায়। শেষ দেড় ঘণ্টায় আবার ঘুরে দাঁড়ায় সূচকটি। এতে দিন শেষ হয় বড় উত্থানে। এ উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ভালো মৌল ভিত্তির কোম্পানিগুলো।

শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি যে পাঁচটি কোম্পানির বড় ভূমিকা ছিল, সেগুলো হলো  ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) ও রবি আজিয়াটা। এই পাঁচ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে ৬৭ পয়েন্ট। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের ৪ টাকা মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ১৯ পয়েন্ট। গ্রামীণফোনের ২৮ টাকা মূল্যবৃদ্ধিতে ১৭ পয়েন্ট, ব্র্যাক ব্যাংকের প্রায় ৩ টাকা মূল্যবৃদ্ধিতে ১২ পয়েন্ট, বিএটির সাড়ে ১৭ টাকা মূল্যবৃদ্ধিতে ১২ পয়েন্ট ও রবি আজিয়াটার শেয়ারের দাম ৩ টাকা বৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে ৭ পয়েন্ট।

ঢাকার বাজারে রোববার লেনদেনের শীর্ষে ছিল গ্রামীণফোন। এ নিয়ে টানা চার দিন কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। তাতে চার দিনেই এটির শেয়ারের দাম ৯৯ টাকা বা ৪০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৬ টাকায়। গতকাল এক দিনেই ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির ১৩৯ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়।

বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ

এদিকে গত শনিবার রাতে পদত্যাগ করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম। শনিবার রাত ১১টার পর হোয়াটসঅ্যাপে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। আজ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁর ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংস্থাটির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরীকে। আজই এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

* ছয় কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের আদেশ বাতিল করেছে বিএসইসি।* আদেশ বাতিলের ফলে তিন কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হয়নি।

শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম গত ২৮ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে চার বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ পান। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে তিনি কর্মস্থলে যোগ দেননি। জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেওয়ার দিনই অর্থাৎ ৩ আগস্ট তিনি সরকারি সফর শেষে দেশে ফেরেন।

শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলামের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে নানা অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পাশাপাশি বিনিয়োগ আকর্ষণের নামে বিদেশি রোড শো করার কারণে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত ছিলেন। শেয়ারবাজারে কারসাজিকারকদের নানাভাবে সহায়তা করতেন কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়াতে। এ ছাড়া তাঁর প্রশ্রয়ে শেয়ারবাজারে একটি চক্র গড়ে ওঠে। যারা নানাভাবে সুযোগ–সুবিধা পেত শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটে।

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল

৫ আগস্ট থেকে কার্যালয়ে না এলেও গত বৃহস্পতিবার রাতে শেয়ারবাজারের ৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর প্রত্যাহারের আদেশ জারি করে বিএসইসি। এতে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো লিমিটেডসহ তিন কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস গতকাল থেকে উঠে যাওয়ার কথা ছিল। বেক্সিমকো ছাড়া এ তালিকায় থাকা অন্য দুটি কোম্পানি ছিল খুলনা পাওয়ার ও শাহজিবাজার পাওয়ার। বাকি তিন কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস আগামী বুধবার থেকে উঠে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল ওই আদেশে। কোম্পানি তিনটি ছিল ইসলামী ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের পদত্যাগের পরও সালমান এফ রহমানকে শেয়ার বিক্রি সুযোগ করে দিতে বাসা থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের আদেশ জারি করেন বিএসইসির পদত্যাগী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম। এ কারণে আদেশটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয় বাজারে।

সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল লেনদেন শুরুর আগেই ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের আদেশটি কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। সেই অনুযায়ী, রোববার সকালে লেনদেন শুরুর আগেই তা দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে দুপুরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের আদেশটি বাতিলের জন্য বিএসইসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশে বিএসইসি ৮ আগস্ট জারি করা আদেশটি বাতিল করে।

শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে ২০২০ সাল থেকে কয়েক দফায় শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। এতে শেয়ারের দাম বিএসইসির বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সীমার নিচে নামার সুযোগ ছিল না। সর্বশেষ দফায় ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল বিএসইসি। এরপর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। এতে দেড় বছর ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের তেমন কোনো লেনদেন হয়নি। পুঁজিবাজারেও একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। এ অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।