শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

রেকর্ড লভ্যাংশের খবরে লিনডের শেয়ারের দামে বড় লাফ

  • বিনিয়োগকারীরা প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ১৫৪ টাকা লভ্যাংশ হিসেবে পাবেন।

  • এর আগে লিনডে সর্বোচ্চ ৫৫০ শতাংশ বা প্রতি শেয়ারের জন্য ৫৫ টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০২১ সালে

বিনিয়োগকারীদের জন্য রেকর্ড হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি লিনডে বাংলাদেশ। কোম্পানিটি গত বছরের অক্টোবর প্রান্তিকের ভিত্তিতে ১ হাজার ৫৪০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তাতে বিনিয়োগকারীরা প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ১৫৪ টাকা লভ্যাংশ হিসেবে পাবেন।

গত বুধবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এ তথ্য গতকাল বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানায় কোম্পানিটি। এ খবরেই লিনডে বাংলাদেশের শেয়ারের দামে বড় উত্থান হয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪২৪ টাকা বা ৪৩ শতাংশের বেশি। তাতে ৯৮৫ টাকার শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়ে এক লাফে ১ হাজার ৪০৯ টাকায় উঠে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে লভ্যাংশের খবরে আর কোনো কোম্পানির শেয়ারের দামে এমন উত্থান দেখা যায়নি।

কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারপ্রতি ১৫৪ টাকা বা ১ হাজার ৫৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় লিনডে বাংলাদেশ। তখন এটির নাম ছিল বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানি (বিওসি) বাংলাদেশ। ২০১১ সালে কোম্পানিটির নাম বদলে হয় লিনডে বাংলাদেশ।

লিনডে বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, তারা অন্তর্বর্তীকালীন যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে শেয়ারধারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বাবদ মোট ২৪০ কোটি টাকা বিতরণ করবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সাধারণত বিনিয়োগকারীদের বছরে দুবার লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। প্রথমবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণা করে, পরে বছরের শেষে চূড়ান্ত লভ্যাংশ অনুমোদন করে। এর আগে লিনডে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন ও চূড়ান্ত লভ্যাংশ মিলিয়ে কখনোই এত বেশি লভ্যাংশ দেয়নি। এবারই প্রথম রেকর্ড ১ হাজার ৫৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।

রেকর্ড পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণার খবরে গতকাল দিনের শুরু থেকেই লিনডে বাংলাদেশের শেয়ারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়। বদৌলতে গতকাল ঢাকার বাজারে লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে কোম্পানিটি। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির ১৪ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়। দিনের শুরুতেই লিনডের প্রতিটি শেয়ারের দাম ২৮ টাকা বেড়ে ১ হাজার ১৩ টাকায় ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় একপর্যায়ে দাম ৬১৫ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকায় ওঠে। তবে দিন শেষে আবার দাম কিছুটা কমে আসে।

নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে লভ্যাংশ ঘোষণাসহ কোম্পানির কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য থাকলে সে ক্ষেত্রে শেয়ারের দামের ওপর কোনো সীমা আরোপ থাকে না। এ কারণেই গতকাল লিনডের শেয়ারের দাম ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে কোম্পানিটি গত বছরের ডিসেম্বরে সমাপ্ত আর্থিক বছরের হিসাব পর্যালোচনার জন্য আগামী ২৭ জুন পর্ষদ সভা ডেকেছে। ওই সভা থেকে পুরো বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত লভ্যাংশের ঘোষণা আসতে পারে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ ৫৫০ শতাংশ বা প্রতি শেয়ারের জন্য ৫৫ টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০২১ সালে।

জানা গেছে, এ দেশ থেকে ঝালাই বা ওয়েল্ডিং পণ্যের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লিনডে বাংলাদেশ। সম্প্রতি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ ব্যবসার জন্য প্রতিষ্ঠিত লিনডে ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের সব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কোম্পানিটি জানিয়েছে, ওয়েল্ডিং ব্যবসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ইসাব গ্রুপের সঙ্গে শেয়ার বিক্রির চুক্তি অনুমোদন করা হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় লিনডে ইন্ডাস্ট্রিজের ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার ৫০১টি শেয়ার হস্তান্তর করা হবে। শেয়ার কেনাবেচার এ সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য ২৩ জুন লিনডের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) ডাকা হয়েছে। শেয়ারধারীদের অনুমোদনের পর এ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে।

ঝালাই পণ্যের ব্যবসা বিক্রির সিদ্ধান্তের পরপরই রেকর্ড লভ্যাংশের ঘোষণা এল। পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, কোম্পানিটির প্রতিবছরের মুনাফা থেকে লভ্যাংশ বিতরণের পর একটি অংশ কোম্পানির হিসাবে জমা ছিল, যা বছর বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় কোম্পানিটির খুব বেশি উদ্বৃত্ত অর্থের প্রয়োজন নেই। এ কারণে জমা অর্থের একটি অংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি কোম্পানির উদ্যোক্তারাও পাবেন মোটা অঙ্কের মুনাফা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, লিনডে বাংলাদেশের শেয়ারের ৬০ শতাংশের মালিকানা কোম্পানিটির মূল উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১১ শতাংশ শেয়ার আছে। সেই হিসাবে ঘোষিত রেকর্ড লভ্যাংশের বড় অংশই পাবেন কোম্পানির উদ্যোক্তারা।