রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসের জামানতবিহীন সীমা বাড়িয়েও শেয়ারবাজারের পতন ঠেকানো গেল না। আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ের জামানত ছাড়া লেনদেনসীমা ১০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করা হয় গতকাল সোমবার। আজ মঙ্গলবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। মূলত শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জামানতবিহীন লেনদেনসীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পর আজ সকাল থেকে বাজারে সক্রিয় ছিল আইসিবি। এতে সকালে লেনদেন শুরু হয় সূচকের উত্থান দিয়ে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথম ঘণ্টাতেই আগের দিনের চেয়ে ৯২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। যদিও দিন শেষে সূচকের এই উত্থান আর ধরে রাখা যায়নি। দিন শেষ হয় সূচকের পতন দিয়েই। দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি আরও ২৩ পয়েন্ট কমে নেমে আসে ৫ হাজার ৩৭১ পয়েন্টে। তাতে আজ সাড়ে চার ঘণ্টার লেনদেনে ডিএসইএক্স সূচকটির ১১৫ পয়েন্টের উত্থান–পতন ঘটে।
বড় উত্থানের পরও দিন শেষে সূচক কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বাজারে শেয়ারের দাম কিছুটা বাড়লেই কার আগে কে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নেবেন, সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে শেয়ারের দাম বাড়লেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। এ কারণে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের বাজার ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতাও থামছে না। সোমবারও ৬৬৩ জন বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। এর বিপরীতে ওই দিন ৪৫১টি নতুন বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খোলা হয়েছে।
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে এমনিতেই বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম। আবার বড় অংশই ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী। স্বভাবগতভাবে তাঁরা কম ধৈর্যশীল। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সাত দিন ধরে টানা দরপতন চলছে শেয়ারবাজারে। এই সাত দিনে ডিএসইএক্স সূচকটি ৩২৬ পয়েন্ট বা পৌনে ৬ শতাংশ কমেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি এই সাত দিনে ৭৭২ পয়েন্ট বা পৌনে ৫ শতাংশ কমেছে। পতন থামাতে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শেয়ারের দাম কমার সীমা সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ বেঁধে দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। কিন্তু দরপতনের বাজারে দেখা যাচ্ছে, সেটির উল্টো ফল। পতন শুরু হলেই বেশির ভাগ শেয়ারের দামই সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করে কমে যাচ্ছে।
ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে আজকের দরপতনে যেসব কোম্পানি বড় ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে অন্যতম কোহিনূর কেমিক্যাল, রেনেটা, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, বেস্ট হোল্ডিংস, বেক্সিমকো ফার্মা, ইউনিক হোটেল, নাভানা ফার্মা, যমুনা ব্যাংক, ওরিয়ন ইনফিউশন ও লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট। এ ১০ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে ১৪ পয়েন্ট।
এদিকে দরপতন অব্যাহত থাকলেও ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৯২ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩১ কোটি টাকা বেশি।