বিক্রির চাপ কমে যাওয়ায় শেয়ারবাজারে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটি আজ সোমবার ৬৪ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি বেড়েছে ৭৪ পয়েন্ট। দুই বাজারে সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে।
বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামীকাল মঙ্গলবারের লেনদেন শেষে শেয়ারবাজারে ঈদ ও বৈশাখের ছুটি শুরু হবে। সরকারি ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে টানা পাঁচ দিন শেয়ারবাজারেও লেনদেন বন্ধ থাকবে। ছুটি ঘনিয়ে আসায় বাজারে যেমন ক্রেতা কম, তেমনি বিক্রির চাপও কমেছে। এতে সূচকের বড় উত্থান হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজার পতনের ধারায় রয়েছে। এ সময় মাঝেমধ্যে কয়েক দিন বাজারে উত্থান হলেও বেশির ভাগ দিনই দরপতন ঘটে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার ছেড়েছেন। এখন যাঁরা বাজারে রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বড় ধরনের লোকসান গুনছেন। এ কারণে লোকসানে এখন আর কেউ শেয়ার বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ ছাড়া বাজার একটু ঊর্ধ্বমুখী থাকলেই বিক্রির চাপ কমে যায়। এটিই ঘটেছে আজকের বাজারে। এ কারণে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারেরই দাম বেড়েছে।
বাজার–সংশ্লিষ্ট আরেকটি অংশ বলছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ নিয়ে কিছুদিন ধরে বাজারে নানা ধরনের জল্পনাকল্পনা চলছিল। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও একধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে নতুন করে চার বছরের জন্য পুনর্নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে চেয়ারম্যান নিয়োগকে কেন্দ্র করে বাজারে যে অশ্চিয়তা ছিল, সেটি কেটে গেছে। তারও প্রভাব বাজারে পড়েছে বলে মনে করছেন বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ।
ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৮১ শতাংশ বা ৩১৬টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে ৯ শতাংশ বা ৩৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টির বা ১০ শতাংশের দাম। চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হওয়া ১৫৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১২টিরই দাম বেড়েছে, কমেছে ২৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির দাম।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাত। এদিন এ খাতের সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬২ কোটি টাকা। এরপরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে ওষুধ, খাদ্য ও প্রকৌশল খাতে। ওষুধ খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৭ কোটি টাকা। আর খাদ্য ও প্রকৌশল খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪৭ ও ৩৬ কোটি টাকা।
ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, লাভেলো, মালেক স্পিনিং, শাইনপুকুর সিরামিকস ও সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস। এ পাঁচ কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৬ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে দেশবন্ধু পলিমার, বিডিথাই অ্যালুমিনিয়াম, ফু-ওয়াং ফুড, এমারেল্ড অয়েল ও নাভানা সিএনজি। আর দরপতনের শীর্ষে ছিল নর্দান জুট, পূবালী ব্যাংক, কেঅ্যান্ডকিউ, আইডিএলসি ও পিপলস লিজিং।
ডিএসইতে আজ দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪১৫ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২২ কোটি টাকা কম। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন হয় ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার। গত তিন মাসের বেশি সময় পর চট্টগ্রামের বাজারে এটি সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি সিএসইতে সর্বনিম্ন প্রায় চার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।