ঢাকার বাজারে গতকাল ৫৩৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ১১৫ কোটি টাকা বেশি। লেনদেনের এক-তৃতীয়াংশই ছিল বিমা কোম্পানিগুলোর।
মুদ্রানীতি ঘোষণার পরপরই গতি ফিরল শেয়ারবাজারে। কয়েক দিন ধরে মুদ্রানীতি আতঙ্কে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে গিয়েছিল। এরপর গতকাল বাজার আবার ছন্দে ফিরেছে। এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৩ পয়েন্ট বেড়েছে। আর লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ১১৫ কোটি টাকা বেড়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন বাজারে লেনদেন বেশ কমে গিয়েছিল। মুদ্রানীতিতে ব্যাংকঋণ ও নীতি সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা ছিল। মুদ্রানীতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই শঙ্কার অবসান হয়। ব্যাংকঋণের সুদহার বিদ্যমান সুদের চেয়ে কয়েক শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মুদ্রানীতিতে। তাই মুদ্রানীতি নিয়ে বাজারে যেসব গুজব বা শঙ্কা ছিল, সেগুলোর অবসান ঘটে। এর ফলে নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের অনেকে গতকাল নতুন করে আবার বাজারে সক্রিয় হয়েছেন।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকালের বাজারে ব্যক্তি শ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের দিক থেকে শেয়ার বিক্রির চাপ কম ছিল। তার চেয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনায় আগ্রহ ছিল বেশি। দুইয়ে মিলিয়ে তাই বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে বাজারে নানা ধরনের কথাবার্তা চলছিল। যার কারণে বিনিয়োগকারীদের অনেকের মধ্যে একধরনের দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। ফলে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে চুপচাপ বসে ছিলেন। মুদ্রানীতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে এসব কথাবার্তা ও বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে। এ কারণে সাইড লাইনে থাকা অনেক বিনিয়োগকারী আবার বাজারে সক্রিয় হয়েছেন। যার প্রভাব আমরা গতকালের বাজারে দেখেছি।’
বাজারসংশ্লিষ্ট আরেকটি অংশ বলছে, সামনে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে। তার আগে বিনিয়োগকারীদের অনেকেই হয়তো বাজার থেকে মুনাফা তুলবেন। তাই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী অল্প কয়েক দিনে বাড়তি কিছু মুনাফার আশায় বাজারে সক্রিয় হয়েছেন।
ব্রোকারেজ হাউস লংকা বাংলা সিকিউরিটিজের বাজার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেনের শীর্ষ ছিল বিমা খাত। ঢাকার বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ছিল এ খাতের দখলে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬৪ কোটি টাকা। লেনদেনের দিক থেকে বিমা খাতের পরের অবস্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বিমা ও খাদ্য খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের দখলে ছিল ঢাকার বাজারের প্রায় অর্ধেক লেনদেন।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধিতেও এগিয়ে ছিল বিমা খাতের কোম্পানি। এ খাতের লেনদেন হওয়া ৫৬ কোম্পানির মধ্যে গতকাল ৫১টিরই দাম বেড়েছে। অপরিবর্তিত ছিল ৪টির আর কমেছে ১টির দাম। আবার ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির সব কটিই ছিল বিমা খাতের। এগুলো হলো মেঘনা ইনস্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স ও রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম এদিন সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে না।
শুধু মূল্যবৃদ্ধি নয়, লেনদেনের দিক থেকেও এগিয়ে ছিল বিমা খাতের কোম্পানি। ডিএসইতে সোমবার লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মধ্যে চারটিই ছিল বিমা খাতের। বেশ কিছুদিন ধরেই শেয়ারবাজারে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে এগিয়ে রয়েছে। কারণ হিসেবে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর মূলধন তুলনামূলক কম। তাই কারসাজিকারীরা কারসাজির জন্য এসব শেয়ার বেছে নেন। কারণ, তুলনামূলক কম বিনিয়োগ করে দ্রুত এসব শেয়ারের দাম বাড়ানো সম্ভব।
ডিএসইতে সোমবার দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৩৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১১৫ কোটি টাকা বেশি। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩১৪ পয়েন্টে। গত ১১ জুনের পর এটিই ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ অবস্থান।