দেশের অর্থনীতি যখন চাপে, মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন তামাকজাত পণ্য বিক্রি বেড়েছে হু হু করে। আর তাতেই সিগারেট বিক্রি করে রেকর্ড আয় ও মুনাফা করেছে তামাক পণ্য বাজারজাতকারী বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)।
বিএটিবির পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার চলতি বছরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি–জুন) কোম্পানিটি ২১ হাজার ২৩০ কোটি টাকার রেকর্ড সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি করেছে। আর এ বিক্রির বিপরীতে সব খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৯৫০ কোটি টাকা। মুনাফার ক্ষেত্রেও কোম্পানিটি রেকর্ড করেছে।
২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির ১৩ বছরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছর কোম্পানিটি যে ব্যবসা ও মুনাফা করেছে, তা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
২০১০ সালের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটির ব্যবসা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকার। আর সে বছর কোম্পানিটির নিট মুনাফা ছিল ১৫৪ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটির ব্যবসা করেছে ২১ হাজার ২৩০ কোটি টাকার। আর নিট মুনাফা করেছে ৯৫০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১৩ বছরে বহুজাতিক এ কোম্পানিটির আয় ও মুনাফা ছয় গুণের বেশি বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে জুন—এ ছয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৫৯ পয়সায়, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৬ টাকা ৯৩ পয়সা।
একটি কোম্পানির নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে পণ্য বিক্রি ও অন্যান্য খাত থেকে যে অর্থ পায়, সেটি ওই কোম্পানির মোট আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই আয় থেকে সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর কোম্পানির হাতে যা অবশিষ্ট থাকে, তাই ওই প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
সিগারেট কোম্পানির ক্ষেত্রে সরকার কর ও ভ্যাট সাধারণ যেকোনো কোম্পানির তুলনায় বেশি। সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন সময় সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী কোম্পানির ওপর কর ও ভ্যাট বাড়িয়ে থাকে। এ কারণে কয়েক বছর ধরে বাজেটকে কেন্দ্র করে সিগারেটের দাম বেড়ে যায়। তবে বিএটিবির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, শুল্ক, কর ও ভ্যাট বাড়িয়েও সিগারেটের ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। বরং দাম যত বাড়ছে সিগারেটের বিক্রিও তত বাড়ছে। এতে বাড়ছে সিগারেট কোম্পানির আয় ও মুনাফা।
দেশে বর্তমানে কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করহার তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির। এ করহার ৪৫ শতাংশ। তার সঙ্গে আছে আড়াই শতাংশ সারচার্জ। এর বাইরে অন্যান্য শুল্ক ও ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন করও রয়েছে। কিন্তু বছর বছর কর বাড়িয়েও সিগারেটের বিক্রি কমানো যাচ্ছে না।
বিএটিবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি ৩ হাজার ৯১১ কোটি পিস সিগারেট বিক্রি করেছে। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি বিক্রি করেছিল ৩ হাজার ৫৩৯ কোটি পিস সিগারেট। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ৩৭২ কোটি পিস সিগারেট বিক্রি বেড়েছে।
এদিকে রেকর্ড আয় ও মুনাফার খবরেও গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তরেই আটকে ছিল। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ৫১৮ টাকা ৭০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিএটিবি বেনসন, গোল্ডলিফ, ডার্বি, হলিউড, স্টার, ক্যাপসটেন, পাইলটসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট বিক্রি করে।