উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের শর্তপূরণ করতে পারেনি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। এ কারণে কোম্পানিটির মূলধন বাড়াতে নতুন শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত মঙ্গলবার বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এই সিদ্ধান্তের কথা গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে নতুন করে শেয়ার ইস্যু করে মূলধন সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল কোম্পানিটিকে এই প্রক্রিয়ায় মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদনও দেয় বিএসইসির বিগত কমিশন। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের বর্তমান উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিপরীতে প্রায় ৯ কোটি ৯০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ২০০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন নেয়। নতুন করে সংগ্রহ করা এই অর্থ ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করার কথা ছিল কোম্পানিটির।
বাজারমূল্যের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ মূল্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল কোম্পানিটিকে। গত ৮ এপ্রিল যেদিন বিএসইসির পক্ষ থেকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়, সেদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১১০ টাকার বেশি। অথচ কোম্পানির উদ্যোক্তারা মাত্র ২২ টাকায় নিজেদের মধ্যে নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পায়, যার মধ্যে ১০ টাকা অভিহিত মূল্য আর ১২ টাকা অধিমূল্য বা প্রিমিয়াম। নতুন শেয়ার ছেড়ে মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদন–সংক্রান্ত চিঠিতে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে এই অর্থ জমা দিতে বলা হয় উদ্যোক্তাদের। কিন্তু সেই শর্ত পালনে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। তিন মাসের মধ্যে অর্থ জমা না দিয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করে কোম্পানিটি।
এ অবস্থায় পুনর্গঠিত কমিশন কোম্পানিটির সময় বৃদ্ধির আবেদন নামঞ্জুর করার পাশাপাশি কম দামে উদ্যোক্তাদের মধ্যে শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাবটিও বাতিল করে দেয়। বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিগত কমিশনের সময় আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজসহ বেশ কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তারা বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে নিজেদের নামে নতুন শেয়ার ইস্যুর সুবিধা পেয়েছেন। মূলত এসব উদ্যোক্তা বেনামে শেয়ার কিনে বাজারে প্রথমে শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়। এরপর বাজারমূল্যের চেয়ে কয়েক গুণ কম দামে নতুন শেয়ার ইস্যু করে। পরবর্তী সময়ে সেসব শেয়ার বিক্রি করেও বিপুল মুনাফা তুলে নেয় বাজার থেকে। মূলত শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা করতেই এ ধরনের সুবিধা পেয়েছিল কিছু কোম্পানি। তাদেরই একটি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশের পটপরিবর্তনের পর আলিফের এ উদ্যোগটি সফল হয়নি।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, বিগত কমিশনের সময় যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তারা বিএসইসির কাছ থেকে নানাভাবে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিল আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তারা। বন্ধ কোম্পানির নামমাত্র শেয়ার কিনে, কখনো বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে শেয়ার ইস্যু করে, কখনো বন্ডের মাধ্যমে অর্থ তুলে শেয়ারবাজার থেকে কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিটি।
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএসইসি পুনর্গঠিত হয়। তাতে আলিফের বিশেষ সুবিধা নিয়ে শেয়ারবাজার থেকে বাড়তি মুনাফার একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়।