গ্রামীণফোন, রবির পর এবার শেয়ারবাজারে আসতে চায় দেশের টেলিকম খাতের তৃতীয় শীর্ষ মুঠোফোন কোম্পানি বাংলালিংক। কোম্পানিটি স্থির মূল্য (ফিক্সড প্রাইস) পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার এ নিয়ে আলোচনা করেছেন বাংলালিংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
বিএসইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেস ভ্যালুতে আইপিওতে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। বর্তমানে বাংলালিংকের পরিশোধিত মূলধন ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হলে আইপিওতে পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হয়। সেই হিসাবে আইপিও–পরবর্তী পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়তে হলে কোম্পানিটিকে ৯০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার বিক্রি করতে হবে।
অবশ্য বাংলালিংকের আইপিও অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি বিএসইসি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোম্পানিটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, বাংলালিংকের যে পরিমাণ পরিশোধিত মূলধন ও বর্তমানে যে মুনাফা, তাতে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। বিদ্যমান পরিশোধিত মূলধনে ন্যূনতম ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিতে হলে কোম্পানিটির প্রতিবছর ৮০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করতে হবে।
দেশের টেলিকম খাতের তৃতীয় শীর্ষ এ কোম্পানি সর্বশেষ ২০২২ সালে মুনাফা করেছে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, স্থির পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আইপিওতে আসতে চাইলে ওই কোম্পানিকে আইপিও আবেদনের আগের বছর মুনাফায় থাকতে হয়। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলালিংক ২০২২ সালে মুনাফায় ফিরেছে। সেই হিসাবে মুনাফার এ শর্ত পূরণ করেছে বাংলালিংক।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলালিংক আইপিওতে আসার আগ্রহ দেখালেও কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বেশি হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ জন্য বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি যদি প্রতিবছর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে আইপিওর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিএসইসিও কোম্পানিটিকে এ–ও বলেছে, তালিকাভুক্তির পর যদি কোনো কারণে কোম্পানির মুনাফা কমে যায়, তাহলে উদ্যোক্তাদের আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলালিংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও কোম্পানিটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান ভিওন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান তেরজিওগ্লু, বাংলালিংকের কোম্পানি সচিব ও প্রধান আইন কর্মকর্তা জাহরাত আদিব চৌধুরী ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা চেম ভেলিপাসাওগ্লু।
বাংলালিংকের শতভাগ মালিকানা রয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কোম্পানি ভিওন লিমিটেডের হাতে। গতকাল সোমবার কোম্পানিটি তাদের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলালিংকের বার্ষিক আয় আগের বছরের চেয়ে ১২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকায়। প্রথমবারের মতো গত বছর কোম্পানিটির রাজস্ব আয়ে ১২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানিটির গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটিতে।
বাংলালিংকের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকের বৈঠকে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও তাদের স্বাগত জানিয়েছি। তবে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বেশি হওয়ায় আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলেছি তাদের।’
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাংলালিংকই হবে সবচেয়ে বড় মূলধনি কোম্পানি। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মূলধনি কোম্পানি রবি আজিয়াটা। এটির পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রবি আজিয়াটা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর আগে টেলিকম খাতের প্রথম কোম্পানি হিসেবে ২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় গ্রামীণফোন। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন প্রায় ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান এক লিখিত বক্তব্যে প্রথম আলোকে বলেন, ভিওন গ্রুপ বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা করতে আগ্রহী। পাশাপাশি এ দেশের মানুষের সঙ্গে কোম্পানির সফলতা ও অংশীদারি ভাগাভাগি করতে আগ্রহী। তারই অংশ হিসেবে বিএসইসির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। উভয় প্রতিষ্ঠান মিলে ভবিষ্যতের সুযোগ তৈরিতে কাজ করবে।