ঢাকার বাজারের লেনদেন আবারও ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। তাতে লেনদেন ফিরেছে দেড় মাস আগের অবস্থানে।
গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে ছিল সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রায় ১৪৪ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। আর এ পাঁচ দিনে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে আড়াই শতাংশ বা ৩ টাকা ৬০ পয়সা।
গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে থাকা এ কোম্পানি চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববারও লেনদেনের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। তবে এদিন কোম্পানিটির প্রতিটির শেয়ারের দাম এক দিনেই ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা আড়াই শতাংশের বেশি কমে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ টাকায়। একই অবস্থা জেনেক্স ইনফোসিসেরও। গত সপ্তাহ শেষে লেনদেনের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে থাকা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এ কোম্পানির শেয়ারের দাম গতকাল এক দিনেই প্রায় ৩ টাকা বা ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৬ টাকায়।
গত সপ্তাহে লেনদেনের তৃতীয় অবস্থানে থাকা শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের দাম গতকাল এক দিনেই ৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৬০ পয়সায়। এভাবে লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের উল্লেখযোগ্য দরপতন হয়েছে গতকাল। তাতে এদিন বাজারে সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমনিতে কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজারের লেনদেন কয়েকটি কোম্পানিনির্ভর। এসব কোম্পানিতে ভর করে বাজারের লেনদেনেও কিছুটা গতি সঞ্চার হয়েছিল। পাশাপাশি এসব কোম্পানির কয়েকটির দামও বেড়েছিল। কিন্তু গতকাল এসব কোম্পানির শেয়ারের উল্লেখযোগ্য দরপতন হওয়ায় লেনদেন ও সূচক উভয়ই কমে গেছে। তাতে ঢাকার বাজারের লেনদেন আবারও ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে।
ডিএসইর লেনদেন গতকাল দিন শেষে আবারও ফিরে গেছে প্রায় দেড় মাসের আগের অবস্থানে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৮৫ কোটি টাকা। এর আগে সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি ডিএসইতে সর্বনিম্ন ২৮৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নতুন বিনিয়োগ তো আসছেই না, উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে বাজারে শেয়ারের দাম একটু বাড়তে থাকলেই বেড়ে যায় বিক্রির চাপ। ফলে সূচক ও শেয়ারের দাম উভয়ই তখন কমতে শুরু করে। বাজারের নিয়মিত লেনদেনকারীরাও তাতে চুপসে যান।
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে ১০ থেকে ১৫টি কোম্পানিকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারের লেনদেন ঘুরপাক খাচ্ছিল। গতকাল সেসব কোম্পানির শেয়ারের উল্লেখযোগ্য দরপতন ঘটে। ফলে লেনদেনেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া লেনদেনে নেতৃত্ব দেওয়া কোম্পানিগুলোর বড় ধরনের দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে তাঁরা লেনদেনে অংশ নেওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলেছেন। এ ছাড়া কয়েক দিন ধরে বাজারে নতুন করে গুজব ছড়িয়েছে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে। এতেও ব্যক্তিশ্রেণির ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বাজারে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
ঢাকার বাজারে গতকাল দিনটি শুরু হয়েছিল সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি কমতে শুরু করে। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৮ পয়েন্ট কমে প্রায় এক মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২২৮ পয়েন্টে। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকটি সর্বশেষ ৬ হাজার ২১৫ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
ঢাকার বাজারে গতকাল দরপতনের শীর্ষে ছিল অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২৬ টাকা বা ৮ শতাংশের বেশি কমেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল শাইনপুকুর সিরামিকস। এ ছাড়া দরপতনের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে জেমিনি সি ফুড, সোনালি পেপার ও ইন্ট্রাকো সিএনজি।