শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের বহুল আলোচিত কোম্পানি রিংশাইন টেক্সটাইলের উদ্যোক্তাদের শেয়ারের হাতবদল হতে যাচ্ছে। কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের ১৯ কোটি শেয়ার অধিগ্রহণ করছে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস নামের অপর এক কোম্পানি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ অধিগ্রহণের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে।
বিএসইসির এ সম্মতির বিষয়টি গত সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটি বলেছে, ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলসের মালিকেরা রিংশাইনের ৯ জন উদ্যোক্তা পরিচালকের প্রায় ১৯ কোটি শেয়ার অধিগ্রহণ করবেন, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ৩৮ শতাংশ। রিংশাইনের উদ্যোক্তা–পরিচালকদের বেশির ভাগই বিদেশি নাগরিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ অধিগ্রহণের মাধ্যমে মূলত রিংশাইনের মালিকানারই হাতবদল হবে। কোম্পানি পরিচালনায় যুক্ত হবেন ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইলের মালিকেরা। এই কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের অপর কোম্পানি কুইন সাউথের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াং জেমি কোওক চান।
২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় রিংশাইন টেক্সটাইল। ওই সময় প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা তুলেছিল ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা ডিইপিজেডে অবস্থিত কোম্পানিটি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর বছর না ঘুরতেই ২০২০ সালে রিংশাইনে সংকট দেখা দেয়। এ কারণে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ।
তবে এর আগে ব্যাংকের ঋণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় কোম্পানিটির আইপিওর অর্থছাড়ও আটকে দেওয়া হয়েছিল। ফলে এটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। তাই ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বিএসইসি। এরপর সীমিত পর্যায়ে উৎপাদন শুরুর পর কোম্পানিটির ওপর বিশেষ নিরীক্ষা করায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
রিংশাইনের ওপর করা বিএসইসির নিরীক্ষায় বেরিয়ে আসে যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির আড়ালেও পাচার করা হয় অর্থ। এমন এক পরিস্থিতিতে কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটির মালিকানা হস্তান্তর বা নতুন কাউকে দিয়ে কোম্পানিটিকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। তারই অংশ হিসেবে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল উদ্যোক্তা–পরিচালকদের শেয়ার অধিগ্রহণের মাধ্যমে কোম্পানিটির পরিচালনার যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখায়।
বিএসইসি ও কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল রিংশাইনের উদ্যোক্তাদের বিপুল শেয়ার অধিগ্রহণ করলেও ওই শেয়ারের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করছে না। কারণ, রিংশাইনের বিপুল দেনা রয়েছে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে। সেসব দায়দেনার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমেই মূলত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের শেয়ার অধিগ্রহণ করছে ওয়াইজ স্টার। বিষয়টি এমন, রিংশাইনের যত দায়দেনা আছে—সব বহন করবে ওয়াইজ স্টার। বিনিময়ে কোম্পানিটির মালিকানায় যুক্ত হবে তারা।
রিংশাইনের কোম্পানি সচিব অনিরুদ্ধ পিয়াল গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সব মিলিয়ে বর্তমানে কোম্পানিটির দেনার পরিমাণ ৪২২ কোটি টাকা। এ দেনার পুরোটা ওয়াইজ স্টার অধিগ্রহণ করবে।
জানা গেছে, রিশাইনের মালিকদের সম্মতিতেই কোম্পানিটির শেয়ার হাতবদলের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, শর্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের আর কোনো শেয়ার থাকবে না। সব শেয়ার সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরিত হবে। তবে ওয়াইজ স্টারের কাছে উদ্যোক্তাদের যেসব শেয়ার হস্তান্তরিত হবে, সেগুলোর ওপর বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা বা লকইন থাকবে।