শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজারে দুই মাস পর লেনদেন আবার হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন আবারও হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৯ কোটি টাকা, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ গত ৭ মে ডিএসইতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

লেনদেনের পাশাপাশি ডিএসইতে সূচকও বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৩০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৯৫ পয়েন্টে। এর ফলে ডিএসইএক্স সূচকটিও গত প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর আগে সর্বশেষ গত ১৩ মে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৬৬৭ পয়েন্টের সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল।

বর্তমানে যেনতেনভাবেই বাজার বাড়লেই খুশি থাকছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাই তারা কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন কারসাজিকারকেরা
মোহাম্মদ মুসা, ডিন, বাণিজ্য অনুষদ, ইউআইইউ

ঢাকার বাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ালেও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এদিন লেনদেন কমেছে। যদিও দিন শেষে সেখানকার বাজারের সার্বিক সূচকটি আগের দিনের চেয়ে ৯৬ পয়েন্ট বেড়েছে। সিএসইতে আজ দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৮ কোটি টাকা কম।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইন সংশোধন করে সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ খবরে গত সপ্তাহ থেকে শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরেছে। বাজারে গতি ফিরতে শুরু করায় নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরাও বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

লেনদেন ও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী এ ধারাকে বাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পাশাপাশি তাঁরা কিছু বিষয়ে শুরু থেকে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সতর্ক ও সক্রিয় হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সূচক ও লেনদেনের গতি ফিরতে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসানি ও কারসাজির শেয়ারের দাপটও বেড়েছে। কারসাজির এসব শেয়ারের দামের অস্বাভাবিক উত্থান বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে বাজার তাতে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ঢাকার বাজারে আজ মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, কাট্টলী টেক্সটাইল, বিচ হ্যাচারি, এইচআর টেক্সটাইল ও দেশবন্ধু পলিমার। এসব শেয়ারের দাম এক দিনেই সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করে বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় থাকা সব কটিই ছিল ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত। এসব কোম্পানি দুর্বল মানের হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশও দিতে পারছে না কয়েক বছর ধরে। তারপর এসব শেয়ারের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যখন সুযোগ মেলে কারসাজিকারকেরা তাঁদের হাতে থাকা শেয়ারের দাম বাড়াতে তৎপর হয়ে ওঠেন। বাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়লেই খুশি থাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, হোক সেটি যেনতেনভাবেই। তাই তারা কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিতে চায় না। আর সুযোগটিই কাজে লাগান কারসাজিকারকেরা।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মূসা প্রথম আলোকে বলেন, কারসাজিকারকেরা সব সময় সুযোগসন্ধানী। যখনই সুযোগ পান, তাঁরা তাঁদের শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বর্তমানে যেনতেনভাবেই বাজার বাড়লেই খুশি থাকছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাই তারা কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন কারসাজিকারকেরা। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের জন্য মোটেই তা সুখকর নয়।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনে বাজারে কিছুটা গতি ফিরে আসায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে আবারও খোঁজখবর শুরু করেছেন। তবে এখনো প্রত্যাশিত মাত্রায় বিনিয়োগ আসছে না। বিনিয়োগে যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা এখনো বাজার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা বলছেন, বাজারে এখনো ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম সেভাবে বাড়ছে না। এসব শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করলে তখন ভালো ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবেন। তবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়লে সেটি বেশি দিন স্থায়ী হবে না।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৯৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩৭টি বা ৬০ শতাংশের, কমেছে ১১১টির বা ২৮ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৫টি বা প্রায় ১২ শতাংশের। এদিন বাজারে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে সিপার্ল বিচ রিসোর্ট, ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, বিচ হ্যাচারি, সালভো কেমিক্যাল, লাভেলো, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ওরিয়ন ফার্মা, ফারইস্ট নিটিং, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স। এ ১০ কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬১ কোটি টাকার বেশি, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।