জুলাই–আগস্টের ছাত্র–জনতার আন্দোলন ও দেশের কয়েক জেলার ভয়াবহ বন্যার প্রভাব পড়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবসায়। প্রথমবারের মতো গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ কোটি টাকা কম হয়েছে। কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে স্কয়ার ফার্মার বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বিক্রি কমেছে ৬ কোটি টাকার বা শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। একদিকে বিক্রি কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে উৎপাদন, বিপণন ও প্রশাসনিক খরচ। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে উৎপাদন খরচ ছিল ৮৬৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই প্রান্তিকে ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে উৎপাদন খরচ আগের বছরের তুলনায় ১৭ কোটি টাকা বেড়েছে।
একই সঙ্গে বেড়েছে বিপণন খরচও। গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির এই বাবদ খরচ হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসে স্কয়ারের বিপণন খরচ ২২ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। তাতে পরিচালন মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকায়। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬২৬ কোটি টাকা।
এদিকে বিক্রি কম ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির পরও প্রান্তিক শেষে প্রকৃত মুনাফা বেড়েছে স্কয়ার ফার্মার। গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৬৮৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬০৬ কোটি টাকা। কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ ও ব্যাংকে রাখা অর্থের সুদ আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত মুনাফা বেড়েছে। ব্যাংক জমা অর্থের বিপরীতে সুদ ও শেয়ারবাজারের বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ বাবদ আয় করেছে ১৪৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ১০৯ কোটি টাকা। সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে ৫৭ কোটি টাকা আয় হয়েছে স্কয়ার ফার্মার। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ২৭ কোটি টাকা আয় বেড়েছে সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে।
শেয়ারবাজার থেকেও গত তিন মাসে ভালো মুনাফা করেছে স্কয়ার ফার্মা। শেয়ার বিক্রি করে এই তিন মাসে প্রায় ৭২ কোটি টাকা মূলধনি মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। গত বছরের একই প্রান্তিকে শেয়ারবাজার থেকে মূলধনি মুনাফা ছিল ৯ কোটি টাকা। শেয়ারবাজারে মূলধনি মুনাফা বলতে বোঝায়, শেয়ার বিক্রি করে যে মুনাফা হয় সেটিকে। কোম্পানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে ভালো মৌলভিত্তির কিছু শেয়ার বিক্রি করে ভালো মুনাফা করেছে তারা। এই মুনাফা কোম্পানির আয়ে যুক্ত হওয়ায় তাতে সার্বিকভাবে কোম্পানির মুনাফাও বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মার নির্বাহী পরিচালক (ফিন্যান্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি) মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই–আগস্টের আন্দোলন ও বন্যার কারণে প্রথমবারের প্রান্তিক ভিত্তিতে আমাদের বিক্রি কমেছে। তা সত্ত্বেও আমাদের মুনাফা বেড়েছে। কারণ, ব্যাংকের সুদ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো আয় হয়েছে। পাশাপাশি শেয়ারবাজার থেকেও ভালো মুনাফা যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে তাই গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে।’