গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারী ব্যক্তিদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় শেয়ারধারী ব্যক্তিদের ‘নো ডিভিডেন্ড বা কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার’ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বুধবার এ সিদ্ধান্তের কথা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী ব্যক্তিদের জানিয়েছে কোম্পানিটি।
এদিকে লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণার পরও আজ শেয়ারবাজারে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি লেনদেনের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এদিনের লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৯ টাকা বা ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯ টাকায়। লেনদেনের দিক থেকে এটি এদিন চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত আর এক দিনও দেরি না করে কারসাজি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া। এরপর তদন্তে পাওয়া তথ্য অবশ্যই বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঘটা করে জানানো উচিত হবে। কারা এবং কেন—এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ার কিনছে, সেটি সবার জানা দরকার।ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসই
খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের কারখানা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। পাশাপাশি ব্যবসা করতে না পারায় এটি দীর্ঘ সময় ধরে লোকসান গুনছে। ফলে লভ্যাংশ দেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই কোম্পানিটির। তা সত্ত্বেও শেয়ারবাজারে হু হু করে বাড়ছে এটির শেয়ারের দাম। এ ঘটনা শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে বড় ধরনের প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারী ব্যক্তিদের একটি অংশ বাজারের এ ধরনের আচরণে হতাশাও প্রকাশ করেছেন।
ডিএসইতে গত এক মাসে খান ব্রাদার্সের শেয়ারের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর ৭ মাসে এটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫৯ টাকা বা প্রায় ৬০০ শতাংশ। এই মূল্যবৃদ্ধিকে তাই অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, বন্ধ ও লোকসানি একটি কোম্পানির এভাবে মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি ছাড়া আর কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ থাকতে পারে না।
জানতে চাইলে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধ ও লোকসানি একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেটি একেবারেই অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া খালি চোখে দেখেই বলা যায় কারসাজির মাধ্যমেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত আর এক দিনও দেরি না করে কারসাজি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া। এরপর তদন্তে পাওয়া তথ্য অবশ্যই বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঘটা করে জানানো উচিত হবে। কারা এবং কেন—এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ার কিনছে, সেটি সবার জানা দরকার।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ গত এপ্রিলেও এটির শেয়ারের দাম ছিল ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের নিচে। আর আজ লেনদেন শেষে সেই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ টাকা। সেই হিসাবে, ৭ মাসে এটির শেয়ারের দাম ৬০০ শতাংশ বেড়েছে। কয়েক মাস ধরে বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের একটানা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে বাজার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিনিয়োগকারী আজ প্রথম আলোকে বলেন, বাজার এখন কারসাজিকারকের হাতে জিম্মি। বেশি লেনদেন হচ্ছে গুটিকয়েক শেয়ারের। এসব বাজে কোম্পানির শেয়ার নিয়ে দিনের পর দিন কারসাজির ঘটনা ঘটছে। ১০ টাকার শেয়ার প্রায় ৭০ টাকা হয়েছে কয়েক মাসের ব্যবধানে। অথচ এসব শেয়ারে ভালো কোনো বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের কথা নয়। খারাপ শেয়ারের দাপটে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়ে আছে তলানিতে। দিনের পর দিন খারাপ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বাজারে যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে ভালো বিনিয়োগকারী ব্যক্তিরা বাজারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।