শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না করার শর্তে এই সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।
দেশ থেকে টাকা পাচার ঠেকাতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ চায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না—এমন শর্তে প্রতিষ্ঠানটি এই সুযোগ চেয়েছে।
আগের দুই বছর এই সুযোগ দেওয়ার পর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি প্রত্যাহার করা হয়। গতকাল রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনায় সিএসইর পক্ষ থেকে আবার এই সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা করা হয়েছে।
যুক্তি হিসেবে বলা হয়, এই বিধানটি রাখা হলে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা তাঁদের বৈধ উপায়ে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আসা ও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশ থেকে টাকা পাচারের ঝুঁকিও কমবে।
—২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৩৩৭ করদাতা শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করেন।—ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব ইআরএফের।
অবশ্য গত দুই বছর শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করায় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৮৬ জন ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র ৫১ জন করদাতা শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করেছিলেন।
গতকাল প্রাক্-বাজেট সভাটি এনবিআরের ঢাকার আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম ফারুক প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
প্রাক্-বাজেট আলোচনায় সিএসইর পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) নেতারা অংশ নেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) পক্ষ থেকে করপোরেট কর কমানোর দাবি জানানো হয়। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সংগঠনের সচিব নিজাম চৌধুরী দাবিগুলো উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের কিছু খরচকে করমুক্ত রাখা উচিত। যেমন দেশের ব্যাংকগুলোকে আয়কর নথিতে প্রতিবছর ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) বাবদ খরচ হিসেবে দেখানোর সুযোগ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি জানায় বিএবি।
আর্থিক খাতের পাঁচ দাবি১. করপোরেট কর কমানো২. করদাতার করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি৩. শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ৪. শেয়ারবাজারে নগদ লভ্যাংশের করমুক্তসীমা বৃদ্ধি৫. ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানির কর কমানো
সিএসই, ডিএসই, বিএবি, বিএমবিএ, বিআইএর পক্ষ থেকেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর কমানোর দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার করপোরেট করহার ২০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার দাবি জানান। অন্যদিকে সিএসই এই কর সাড়ে ১৭ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ করে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির করমুক্ত নগদ লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করার সুপারিশ করা হয়। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে তা ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর কাটার বিধান প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল সকালে এক বৈঠকে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে গণমাধ্যমে কর্মরত অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। সংগঠনটি প্রস্তাব করেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এমন অবস্থায় সীমিত আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করা উচিত। বর্তমানে এই সীমা তিন লাখ টাকা।