শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজার

নানা উদ্যোগে সূচকের সামান্য উত্থান 

ঢাকার বাজারে সূচক সামান্য বাড়লেও লেনদেন কমে গত তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। চট্টগ্রামে সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন। 

শেয়ার বিক্রি থামিয়ে আবারও শেয়ারবাজারের টানা দরপতন থামানো হয়েছে। তাতে টানা তিন দিন বড় পতনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সূচক সামান্য বেড়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক গতকাল ডিএসইএক্স ১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্ট। এর আগে গত রোববার, সোমবার ও বুধবারের দরপতনে এই সূচক ১৮০ পয়েন্ট কমেছিল। ফলে বুধবার সূচকটি প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে যায়। 

গতকাল ঢাকার বাজারে সূচক সামান্য বাড়লেও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি ২৭ পয়েন্ট কমেছে। সূচকের মতো লেনদেনের ক্ষেত্রেও দুই বাজারে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। যেমন চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন বেড়েছে, অন্যদিকে ঢাকার বাজারে কমেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪১১ কোটি টাকা। গত প্রায় তিন মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে গত ৪ জানুয়ারি ডিএসইতে সর্বনিম্ন ৩৪৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। চট্টগ্রামে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে আড়াই কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। 

একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পতন ঠেকাতে বড় ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে শেয়ার বিক্রি কমানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করেন, সে জন্য তাঁদের বোঝানোর জন্য অনুরোধও করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বাজারে বিক্রির চাপ কিছুটা কমেছে। 

এদিকে দরপতনের কারণে বাজারে যাতে ফোর্সড সেল বা জোর করে বিক্রির চাপ না বাড়ে, সে জন্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নীতি ছাড়ের মেয়াদ বাড়িয়েছে বিএসইসি। শেয়ারবাজারে ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া ঋণের অনাদায়ি অংশের জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ অনাদায়ি ঋণের বিপরীতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি সময় পাবে। 

এ ছাড়া বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে তারল্য ও নীতিসহায়তা নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর খুরশীদ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ডিবিএ ও বিএমবিএর নেতারা শেয়ারবাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তা চান। 

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে প্রত্যেকটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল সুবিধা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেসব ব্যাংক ওই তহবিল-সুবিধা নিয়ে বিনিয়োগ করেনি তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। ’ 

বৈঠকের বিষয়ে ডিবিএর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেপুটি গভর্নর শেয়ারবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে নীতিসহায়তা প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস দেন। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। 

বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার বাজারে গতকাল সূচকের যে উত্থান হয়েছে, তার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল সিটি ব্যাংকের। গত বছর শেষে কোম্পানিটির রেকর্ড মুনাফার খবরে গতকাল সিটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৯০ পয়সা বা ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর সিটি ব্যাংকের এ মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইর সূচক বেড়েছে প্রায় ৪ পয়েন্টের মতো। এর বাইরে সূচকের উত্থানে আরও ভূমিকা রেখেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), রবি, ওরিয়ন ফার্মা, নাভানা ফার্মা।

অন্যদিকে গতকাল দরপতন ঘটেছে রেনেটা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক ও গ্রামীণফোনের মতো ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের। যে কারণে সূচকের বড় উত্থান হয়নি।