শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজার

শেয়ারের বিক্রি কমিয়ে টেনে তোলা হলো সূচক

দুই শেয়ারবাজারেই গতকাল সূচক বেড়েছে। সূচকের পতন ঠেকাতে সকাল থেকে সক্রিয় ছিল বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। 

দুই দিনের বড় পতনের পর শেয়ারবাজারে গতকাল বুধবার সূচকের উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৫৪ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটিও বেড়েছে ১০৬ পয়েন্ট বা প্রায় পৌনে ১ শতাংশ। দুই বাজারের মধ্যে চট্টগ্রামে লেনদেন বাড়লেও ঢাকার বাজারে কমেছে।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত সোম ও মঙ্গলবারের বড় ধরনের দরপতনের পর বাজার কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। গতকাল বিনিয়োগকারীদের দিক থেকে শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল কম। বিনিয়োগকারীরা যাতে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রিতে ঝাঁপিয়ে না পড়েন, সে জন্য সকাল থেকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বেশ সক্রিয় ছিল। তাতে বড় বড় ব্রোকারেজ হাউসগুলো থেকে বিক্রির চাপ কমে যায়।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছু বড় ব্রোকারেজ হাউসের বিক্রির চাপ কমাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দিক থেকেও অনুরোধ করা হয়।

বিক্রি থামিয়ে সূচকের পতন ঠেকানো হলেও বাজারে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪২৩ কোটি টাকা, যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সবশেষ গত ৪ জানুয়ারি ডিএসইতে সর্বনিম্ন ৩৪৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

ঢাকায় কমলেও সিএসইতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। চট্টগ্রামের বাজারে গতকাল লেনদেন হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১ কোটি টাকা বেশি।

তবু কারসাজির শেয়ার শীর্ষে

শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পতনের জন্য কারসাজির মাধ্যমে বাজে কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও ভালো কোম্পানির ক্রমাগত দরপতনকে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, দ্রুত দাম বাড়তে থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজে শেয়ারে ঝুঁকছেন। গতকালও এ ধারা অব্যাহত ছিল।

এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল ফু-ওয়াং সিরামিক, গোল্ডেন সন ও সেন্ট্রাল ফার্মা। তিনটি কোম্পানিই কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। শুধু শ্রেণি সুবিধা নিতে কয়েক শতাংশ লভ্যাংশ দিচ্ছে।

বেশ কিছুদিন ধরে এসব কোম্পানি লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোর বিষয়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে কারসাজিকারকেরা উৎসাহিত হচ্ছেন বলে মনে করেন বাজার–সংশ্লিষ্ট লোকজন।

বিএসইসি-ডিবিএ বৈঠক

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএসইসি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে সংস্থাটির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাইফউদ্দিন, ইস্টার্ন ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান, সিটি ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন আফফান ইউসুফ প্রমুখ অংশ নেন। এ ছাড়া ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

জানতে চাইলে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারের স্বার্থে আমরা মার্জিন ঋণসংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব করেছি। বর্তমানে যে নীতিমালার আলোকে শেয়ার কেনার জন্য ঋণ দেওয়া হয়, তাতে দেখা যাচ্ছে কয়েক দিন পতন হলেই ঋণ সমন্বয়ে শেয়ার বিক্রি বেড়ে যায়। এ ছাড়া ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে আগামী বাজেটে করসুবিধা বাড়ানো উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছি। সেই সঙ্গে নগদ লভ্যাংশের ক্ষেত্রে যে দ্বৈত কর ব্যবস্থা রয়েছে, সেটি প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

এ বৈঠক নিয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো নিরসনে বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে কাজ করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ ছাড়া বাজারে ভালো কোম্পানি আনতে কাজ করার জন্য বিএসইসি থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।