দরপতনের আতঙ্কে শেয়ারবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। মাত্র ৪ কার্যদিবসে প্রায় ১০ হাজার বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। তাতে বাজারে শেয়ারশূন্য বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে।
শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শেয়ার ও বিও হিসাব সংরক্ষণ করে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে শেয়ারবাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ২১৯, যা এক সপ্তাহ আগে ২১ মার্চ ছিল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৪টি। সেই হিসাবে মাত্র চার কার্যদিবসে শেয়ারশূন্য বিও হিসাব বেড়েছে ৯ হাজার ৭৪৫টি।
সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সর্বোচ্চসংখ্যক বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই দিন ৫ হাজার ৪৫২টি বিও হিসাবের সব শেয়ার বিক্রি করা হয়। শেয়ারবাজারে সাধারণত একটি বিও হিসাব মানে একজন বিনিয়োগকারী ধরা হয়। যদিও একজন বিনিয়োগকারীর একক ও যৌথ নামে একাধিক বিও হিসাব থাকতে পারে।
এদিকে যে হারে বিনিয়োগকারীরা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন, সেভাবে নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন না। সিডিবিএলের হিসাবে, গত সপ্তাহে যেখানে প্রায় ১০ হাজার বিও হিসাব খালি হয়, সেখানে নতুন হিসাব খোলা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭০টি। শেয়ার আছে এমন বিও হিসাবের সংখ্যা কমে গত সপ্তাহের শেষে হয় ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯৫টি, যা আগের সপ্তাহের শেষে বা ২১ মার্চ ছিল ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪০টি।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে মন্দাভাব চলছে। তাই নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন না, উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন। গত সপ্তাহে সোম ও বুধবার বড় ধরনের দরপতন ঘটে। এতে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের অনেকে ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক শেয়ার বিক্রির আওতায় পড়েছেন। এ কারণেও শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে যাঁরা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন, তাঁদের শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচে নেমে গেলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ সমন্বয় করতে ওই বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেন। শেয়ারবাজারে এটিই ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রি হিসেবে পরিচিত।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক গত সপ্তাহে চার দিনে ১৬৪ পয়েন্ট বা পৌনে ৩ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে তিন দিনই সূচক কমেছে। তাতে সপ্তাহ শেষে ডিএসইএক্স সূচক কমে ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্টে নেমে আসে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ঢাকার বাজারে দৈনিক লেনদেনের গড় পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৯৪ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৯৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ২ কোটি টাকা।