মাত্র আট দিনের মূল্যবৃদ্ধিতে তিন বছর আগের অবস্থায় ফিরেছে গ্রামীণফোনের (জিপি) শেয়ারের দাম। এই আট দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়েছে প্রায় ১৩০ টাকা বা ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। আর তাতেই এটির শেয়ারের দাম পৌঁছে গেছে প্রায় তিন বছর আগের অবস্থানে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে গ্রামীণফোনের শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৩৭৭ টাকায়। যদিও বৃহস্পতিবার এটির শেয়ারের দাম দুই টাকার বেশি কমেছে। বুধবার কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩৭৯ টাকা। গত প্রায় ৩৯ মাসের ব্যবধানে এটিই কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১০ মে গ্রামীণফোনের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ছিল ৩৭৯ টাকা। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। এটির দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি টাকা। বাজারে মোট লেনদেনের প্রায় ৮ শতাংশই এককভাবে কোম্পানিটির দখলে ছিল।
বাজার–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গ্রামীণফোনের শেয়ারের প্রতি দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। তাতে একটানা কয়েক দিন এটির শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গ্রামীণফোনের ওপর বিশেষ নিরীক্ষা চালানো হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য গ্রামীণফোনের ওপর চালানো বিশেষ নিরীক্ষার পর কোম্পানিটির কাছ থেকে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের নির্দেশে গ্রামীণফোনকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থও পরিশোধ করতে হয়েছিল।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা ধরনের বিধিনিষেধের আওতায়ও পড়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটরটিকে। তাতে এটির ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হয়। সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে কোম্পানিটির শেয়ারের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন বিনিয়োগকারীরা; কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে উঠে এসেছে কোম্পানিটি। গ্রামীণফোনের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম। এ কারণে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে দাপুটে অবস্থানে ফিরেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
গ্রামীণফোনের সর্বশেষ ২০২৩ সালে বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ারের প্রায় ৫৬ শতাংশের মালিকানায় রয়েছে নরওয়ের টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশনস। আর ৩৪ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিকানা রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের হাতে। এর বাইরে নরওয়ের সরকারের হাতেও কোম্পানিটির প্রায় ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গ্রামীণফোনের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিগত সরকারে শাসনামলে গ্রামীণফোন নানাভাবে সরকারি রোষানলে পড়েছিল। কোম্পানিটির মালিকানার সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংশ্লিষ্টতার কারণে সরকারের তরফ থেকে নানা ধরনের বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে হয়। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বাজারে এটির শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় চলে এসেছিল। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে ন্যায্য সুবিধা পাবে কোম্পানিটি। এতে তাঁদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হতে পারে। এ আশায় এটির শেয়ারের প্রতি ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় গ্রামীণফোন। কোম্পানিটি তাদের ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ছেড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। সর্বশেষ জুনের হিসাবে বাজারে ছাড়া কোম্পানিটির ১০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ আর বাকি ১ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে।