শেয়ারবাজারের ১২ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে ৫ সদস্যের বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত সভায় এই তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিএসইসি গঠিত বিশেষ এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাইদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. শফিকুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জিশান হায়দার ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে কমিশনে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির ১৫ বছরের বিভিন্ন অনিয়ম তদন্তে প্রথম ধাপে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হবে। প্রথম ধাপে গঠিত কমিটিকে যে ১২ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো বেক্সিমকো গ্রীন সুকুক আল ইসতিসনা ও আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশীপ গ্রীন জিরো কুপন বন্ড ইস্যুসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অনুসন্ধান। এ দুটি বন্ডের সুবিধাভোগী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এ ছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেডের অনুমোদন-মনোনয়ন, শেয়ার বরাদ্দকরণ/শেয়ার অধিগ্রহণ ও মূল্য নির্ধারণসংক্রান্ত, বেস্ট হোল্ডিংসের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদন ও ইস্যু, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজসংক্রান্ত অনিয়ম ও কারসাজি, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসসংক্রান্ত অনিয়ম ও কারসাজি, ফরচুন শুজসংক্রান্ত যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, রিং শাইন টেক্সটাইলের মূলধন উত্তোলন, আর্থিক প্রতিবেদনের মিথ্যা তথ্য ও অর্থ পাচারসংক্রান্ত, একমি পেস্টিসাইডসসংক্রান্ত যাবতীয় অনিয়ম-কারসাজি, কোয়েস্ট বিডিসি (সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্স) সংক্রান্ত যাবতীয় অনিয়ম-কারসাজি, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের যাবতীয় অনিয়ম-কারসাজি ও এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার অধিগ্রহণ, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ যাবতীয় অনিয়ম-কারসাজির ঘটনা তদন্ত করবে পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি।
বিএসইসি জানিয়েছে, কমিটি মনে করলে কমিটিতে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। আর কমিশনের পক্ষ থেকে কমিটিকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। এরপর পদত্যাগ করেন বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। শিবলীর বিদায়ের পর ১৯ আগস্ট নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বিএসইসিতে যোগ দেন সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বিএসইসির ১০-১৫ বছরে দুই চেয়ারম্যানের সময়কালে শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে সেগুলোর তদন্ত করা হবে। তিনি এ–ও জানান, সব তদন্ত একসঙ্গে না করে ধাপে ধাপে সুনির্দিষ্ট বিষয় ধরে ধরে এই তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তারই অংশ হিসেবে গতকালের কমিশন সভায় প্রথম ধাপে ১২ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে কমিটি গঠন করা হলো।