শেয়ারবাজারের ওটিসি বা ওভার দ্য কাউন্টারে তালিকাভুক্ত ২১ কোম্পানির ওপর বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ বাজারে তালিকাভুক্ত আরও ৪৩ কোম্পানির বিষয়ে সার্বিক প্রতিবেদন তৈরিরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের পক্ষে সংস্থাটির উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ নির্দেশনা পাঠান। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ওটিসি বাজার হচ্ছে মূল বাজার থেকে আলাদা লেনদেনের একটি প্ল্যাটফর্ম। এ প্ল্যাটফর্মে শেয়ারের ক্রেতা-বিক্রেতা থাকে খুবই সীমিত। নিয়মিত লেনদেনও হয় না এ বাজারে। মাঝেমধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির কিছু কিছু শেয়ারের লেনদেন হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওটিসি বাজারে ৬৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। বিএসইসির হিসাবে, এর মধ্যে ২১ কোম্পানির কার্যক্রম সচল রয়েছে। আর বাকি ৪৩টি কোম্পানি বলতে গেলে অস্তিত্বহীন।
ওটিসি বাজারে ৬৪টি কোম্পানির মধ্যে কার্যক্রম সচল থাকা ২১ কোম্পানির ওপর বিশেষ নিরীক্ষা ও কার্যক্রমে না থাকা ৪৩ কোম্পানির বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ।
বিএসইসির গতকালের আদেশে আরও বলা হয়, বিশেষ নিরীক্ষা ও বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় কোম্পানিগুলোর সব ধরনের সম্পত্তি বিক্রি, স্থানান্তর, বন্ধক ও যেকোনো ধরনের পরিবর্তনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি, স্থানান্তর, বন্ধক রাখার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
বিএসইসির আদেশে যে ২১ কোম্পানির কার্যক্রম সচল রয়েছে সেগুলোর ওপরই বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানির নিজস্ব খরচে বা স্টক এক্সচেঞ্জের খরচে বিশেষ এ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়। আর যে ৪৩ কোম্পানি অস্তিত্বহীন সেগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে বলা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর জায়গাজমি, সম্পত্তি কী কী আছে তার বাজারমূল্যসহ কোম্পানিগুলোর বর্তমান অবস্থা, আর্থিক তথ্যসংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনা করে ৪৩ কোম্পানির ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, ওটিসিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের মুনাফা পাচ্ছেন না। এমনকি কোম্পানিগুলোও যথাযথভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের সব অর্থ খুইয়েছেন। এ অবস্থা বিনিয়োগকারীদের জন্য যেমন স্বার্থহানিকর, তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসির কাছেও তা অগ্রহণযোগ্য। এ কারণে ওটিসির কোম্পানিগুলোর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে বিশেষ নিরীক্ষা ও বিশেষ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালের ১ জুলাই বিএসইসি এক নির্দেশনার মাধ্যমে শেয়ারবাজারের ৬৪টি কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করে। পরে এসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের মূল বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়ায় এসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছিল। মূল বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করার পর ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর অপর এক আদেশের মাধ্যমে এসব কোম্পানিকে ওটিসি বাজারে লেনদেনের সুযোগ করে দেয় তৎকালীন বিএসইসি।