১০ বছর পর আবার গতি, আছে উদ্বেগও

  • নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্ব বদলের পর নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারে নতুন বিনিয়োগও আসছে।

  • মে মাসের শেষ দিন থেকে লেনদেন শুরু হলেও বাজারে উত্থানপর্বের শুরু জুলাইয়ের শুরুতে।

  • ডিএসইএক্স গত ৫ জুলাই ছিল ৩ হাজার ৯৮২ পয়েন্ট অবস্থানে। সেখান থেকে প্রায় পাঁচ মাসের ব্যবধানে সূচকটি প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে গত বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৪৬ পয়েন্টে।

২০১০ সালের ধসের ১০ বছরের মাথায় আবারও গতি এসেছে শেয়ারবাজারে। শেয়ারবাজার নিয়ে মানুষের আগ্রহও দেখা যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরাও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বাজারে। এতে বাজারে লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে সূচকও। নতুন করে লক্ষাধিক বিনিয়োগকারী যুক্ত হয়েছেন বাজারে।

গত মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে বিএসইসি পুনর্গঠিত হয়। ৩১ মে থেকে বন্ধ শেয়ারবাজার চালু করা হয়। এরপর থেকে আবারও শেয়ারবাজারের প্রতি নতুন করে আগ্রহী হয়ে ওঠেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্বে পরিবর্তন, ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমে যাওয়া ও করোনার কারণে ব্যবসা–বাণিজ্যের মন্দাভাব—এ তিন কারণে শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরেছে। ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্ব পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠিত হয়েছিল। তিন মেয়াদে ৯ বছর বিএসইসির নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর হাত ধরে শতাধিক মানহীন কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসে। বাজারে আস্থা ফেরাতেও তিনি ব্যর্থ হন। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর থেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে তৃতীয় মেয়াদে তাঁকে ওই পদে বহাল রাখায় শেয়ারবাজার পৌঁছে যায় একেবারে তলানিতে।

এ অবস্থায় গত মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে বিএসইসি পুনর্গঠিত হয়। ৩১ মে থেকে বন্ধ শেয়ারবাজার চালু করা হয়। এরপর থেকে আবারও শেয়ারবাজারের প্রতি নতুন করে আগ্রহী হয়ে ওঠেন বিনিয়োগকারীরা। নতুন কমিশন এসে শুরুতে আইন প্রয়োগ থেকে শুরু করে কিছু বিষয়ে কঠোর অবস্থান দেখায়। তাতে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠেন। এর ফলে বাজারের লেনদেন ও সূচকে গতি ফিরতে দেখা যায়।

মে মাসের শেষ দিন থেকে লেনদেন শুরু হলেও বাজারে উত্থানপর্বের শুরু জুলাইয়ের শুরুতে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত ৫ জুলাই ছিল ৩ হাজার ৯৮২ পয়েন্টের অবস্থানে। সেখান থেকে প্রায় পাঁচ মাসের ব্যবধানে সূচকটি প্রায় ২২ শতাংশ বা ৮৬৫ পয়েন্ট বেড়ে গত বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৪৬ পয়েন্টে। এ সময় বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হয়েছে প্রায় দেড় লাখের মতো। অবশ্য মাঝে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সূচকটি এবারের উত্থানপর্বে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ১১৭ পয়েন্টে উঠেছিল। আর লেনদেন উঠেছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা পর্যন্ত। তবে ডিএসইতে গত সপ্তাহ শেষে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯১ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন এখন প্রায় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে বাজারে।

কারসাজিকারীরাও সক্রিয়

সূচক ও লেনদেনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে চলছে কারসাজিও। এ কারণে বাজারে কিছু কিছু শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। বন্ধ কোম্পানির শেয়ারের দামেরও বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটছে। প্রাথমিকভাবে কারসাজির প্রমাণ মেলায় সরকারি মালিকানার কোম্পানি জিলবাংলার লেনদেন এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। একটি ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে এটির শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজির প্রমাণও পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বর্তমানে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিবর্তনের পর বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে কিছুটা চাঙ্গাভাব দেখতে পাচ্ছি আমরা। কিন্তু আমরা এও দেখছি ভালো কোম্পানির চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে খারাপ কোম্পানির দাম।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী

গতকাল শনিবার শেয়ারবাজার নিয়ে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ডিএসইর সামনেই নানা কারসাজির ঘটনা ঘটছে। কোম্পানির উৎপাদন ও কারখানা বন্ধ রয়েছে এ রকম কোম্পানি নিয়ে ডিএসইর ব্রোকাররা কারসাজি করছেন। কিন্তু ডিএসই কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ পুঁজিবাজারে যদি কোনো দুই নাম্বারি হয় তবে সারা পৃথিবীতে সবার আগে তা স্টক এক্সচেঞ্জ ধরে। কারণ, তাদের ওখানেই লেনদেন হয়। কারা বন্ধ কোম্পানির শেয়ার কিনছে, বিক্রি করছে, তা স্টক এক্সচেঞ্জ জানে।

শুধু বন্ধ কোম্পানি নয়, স্বল্প মূলধনি বিমা খাত নিয়ে কারসাজির বিষয়টি এখন বাজারে বহুল আলোচিত। এ কারণে বিমা খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম কয়েক মাসে অস্বাভাবিক বেড়েছে। গত ৫ মাসে (৩১ মে–২৯ অক্টোবর) বিমা খাতের ২৩টি কোম্পানির দাম সর্বনিম্ন দ্বিগুণ থেকে সর্বোচ্চ চার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিবর্তনের পর বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে কিছুটা চাঙ্গাভাব দেখতে পাচ্ছি আমরা। কিন্তু আমরা এও দেখছি ভালো কোম্পানির চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে খারাপ কোম্পানির দাম। এমনকি অস্তিত্বহীন কোম্পানির দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছে কারসাজির নানা ঘটনা। কিন্তু কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপের ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা ঘাটতি দেখছি।’

কয়েকটি উদাহরণ

বিমা খাতের কোম্পানি এশিয়া ইনস্যুরেন্সের দাম গত ৩১ মে ছিল ১৭ টাকা। সেই দাম ৩৫৭ শতাংশ বা ৬১ টাকা বেড়ে গত বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে
৭৮ টাকায়। অপর কোম্পানি প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ২৩ টাকার শেয়ার এক বছরের ব্যবধানে হয়ে গেছে ১৩৮ টাকা। দাম বেড়েছে ৫০৮ শতাংশ বা ১১৫ টাকার বেশি। আর গত পাঁচ মাসের হিসাবে বেড়েছে ২৬৭ শতাংশ বা ১০০ টাকার বেশি। ২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট সর্বশেষ ২০১৯ সালে শেয়ারধারীদের মাত্র ৪ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানিটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত।

এশিয়া ও প্যারামাউন্টের শেয়ারের দামের এমন উত্থান দেখে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এটিকে ‘আলাদিনের চেরাগ’ মনে করতেই পারেন। সেই মনে করাটা আপাতদৃষ্টে মোটেই অন্যায্য হবে না। অন্যায্য বা অযৌক্তিক এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরও বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর চুপ করে থাকা।

এ ছাড়া বিমা খাতের কোম্পানি গ্লোবাল ইনস্যুরেন্সের ১৪ টাকার শেয়ার গত ৫ মাসে ৩০৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৭ টাকা। একইভাবে এশিয়া প্যাসিফিক ইনস্যুরেন্সের ১৯ টাকার শেয়ার ২৮৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৩ টাকা। এর বাইরে প্রভাতী ইনস্যুরেন্স, পাইওনিয়র, পূরবী জেনারেল, এক্সপ্রেস, ইস্টার্ন, ফেডারেল, পিপলস, নিটোল, প্রাইম, রিপাবলিক, জনতা, কন্টিনেন্টাল, সিটি জেনারেল, রূপালী, নর্দান, অগ্রণী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল, সেন্ট্রাল ও ঢাকা ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন ১০৭ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অর্থাৎ এসব শেয়ারের দাম দ্বিগুণ থেকে সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়েছে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমা খাতের কোম্পানিগুলো স্বল্প মূলধনি। তাই এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা সহজ। কারসাজিকারীরা অল্প বিনিয়োগ করেই শেয়ারের দাম ইচ্ছেমতো বাড়াতে পারে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি বিমা খাত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্তব্য করা হয়েছে। এসব মন্তব্য কারসাজিকারীদের আরও বেশি সহায়তা করেছে।’

সম্প্রতি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এক অনুষ্ঠানে বিমা কোম্পানির লভ্যাংশ–সংক্রান্ত একটি মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি কোম্পানিগুলোর কত লভ্যাংশ দেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে মন্তব্যও করেন, যা শেয়ারের দামকে প্রভাবিত করে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, শেয়ারের দামকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন কোনো মন্তব্য করা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের উচিত নয়।

ঢুকছে টাকা

বাজারে লেনদেনকারী শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই বাজারে টাকা ঢুকছে। আর এ অর্থের বড় একটি অংশ আসছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের পক্ষ থেকে। করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। পণ্য বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় নতুন করে উৎপাদন বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। তাই বাড়তি মুনাফা বা লাভের আশায় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ শেয়ারবাজারে টাকা খাটাচ্ছেন। আবার ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এতে সাধারণ মানুষের একটি অংশ ব্যাংকের বদলে শেয়ারবাজারকেই বেশি লাভজনক মনে করছেন। অর্থাৎ সবাই বেশি আয়ের আশায় ছুটছেন শেয়ারবাজারে। আর এটিকেই সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন কারসাজিকারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী এই প্রতিবেদককে বলেন, জুলাইয়ের শুরুতে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা বাজারে ঢুকেছে তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এসব টাকার বড় অংশই এসেছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এসব অর্থ বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহে ওই ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ৬–৭ কোটি টাকা নতুন অর্থ বাজারে ঢুকেছে। গত ৪–৫ মাসে যত টাকা বাজারে ঢুকেছে বেরিয়েছে তার অনেক কম।

আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আবেদন। ২০০৯ সালে গ্রামীণফোনের পর দ্বিতীয় মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে রবি বাজারে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৫২ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ার ছাড়বে। প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হবে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে।

ভালো শেয়ারের খরা

বাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ মনে করেন, বাজারের গতি ধরে রাখতে হলে ভালো শেয়ারের পাশাপাশি নতুন পণ্য যুক্ত করতে হবে। এ জন্য দ্রুত বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করার কথাও বলেন কেউ কেউ। তাঁদের মতে, শুধু মূলধনিনির্ভর (ইক্যুইটি) বাজার দিয়ে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে না। আবার ব্যাংকনির্ভর বা ব্যবসায়ীদের সাময়িক বিনিয়োগনির্ভর বাজারের ধারা থেকে বেরিয়ে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এ নিয়ে বলেন, ‘যদি বাজারে ভালো কোম্পানি আনা না যায়, তাহলে বাজারের বর্তমান ধারা ধরে রাখা যাবে না। আগেও বহুবার আমরা বাজারে এ ধরনের উত্থান দেখেছি, কিন্তু তা টেকসই হয়নি। উত্থানের পাশাপাশি সেটিকে টেকসই করার দিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদেরও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।’

এদিকে আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আবেদন। ২০০৯ সালে গ্রামীণফোনের পর দ্বিতীয় মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে রবি বাজারে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৫২ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ার ছাড়বে। প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হবে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী মনে করেন, এখনো ভালো শেয়ারের ঘাটতি বড় সমস্যা। পাশাপাশি পণ্যবৈচিত্র্যেও ঘাটতি রয়েছে। এ দুটি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারলে খারাপ শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনাও কমে আসবে।

অতিমূল্যায়িত শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সবার আগে সতর্ক থাকতে হবে বিনিয়োগকারী নিজেকেই। কারণ, তিনি তাঁর কষ্টের টাকা বিনিয়োগ করছেন। সেই টাকার দরদ তাঁরই বেশি থাকা উচিত।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী

সতর্ক হতে হবে বিনিয়োগকারীদেরও

শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, অতিমূল্যায়িত শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সবার আগে সতর্ক থাকতে হবে বিনিয়োগকারী নিজেকেই। কারণ, তিনি তাঁর কষ্টের টাকা বিনিয়োগ করছেন। সেই টাকার দরদ তাঁরই বেশি থাকা উচিত।

বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগগুরু হিসেবে খ্যাত ওয়ারেন বাফেটের মতে, শেয়ারের লাভ করতে হবে কেনার সময়ই। তাই তিনি তেজি বাজারে শেয়ার কেনার পক্ষপাতী ছিলেন না। কিন্তু আমাদের বাজারে দেখা যায় ঠিক উল্টোটি। দাম কমতে শুরু করলে বাজার ছাড়েন বিনিয়োগকারীরা। আর দাম বাড়তে থাকলে বাজারমুখী হন।

বাজারের সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে আইন লঙ্ঘন করে কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে হচ্ছে কি না, সে বিষয় আমরা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পাশাপাশি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিরসনে বন্ড মার্কেট কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ে নতুন ও ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।’