সুগন্ধি আতপ চাল

বাজারে দাম নেই, রপ্তানির অনুমতি চান ব্যবসায়ীরা

শেরপুরের বিভিন্ন চালকলে অবিক্রীত পড়ে আছে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় রপ্তানির সুযোগ চান ব্যবসায়ীরা।

বাজারে দাম কমে যাওয়ায় শেরপুরের চালের ব্যবসায়ীরা এখন লোকসানে সুগন্ধি আতপ চাল বিক্রি করছেন। এমনকি দাম কমে যাওয়ার পরও মিলছে না ক্রেতা। ফলে গত মৌসুমে উৎপাদিত প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল বিভিন্ন চালকলে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে।

বিপুল পরিমাণ চাল অবিক্রীত পড়ে থাকায় জেলার অনেক চালকলের মালিক মূলধনসংকটে পড়েছেন। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছু চালকল। এ অবস্থায় কৃষিনির্ভর খাতটি বাঁচাতে সুগন্ধি আতপ চাল রপ্তানির অনুমতি চান স্থানীয় চালকলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

জেলা চালকল মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জেলার পাঁচ উপজেলা ছাড়াও ময়মনসিংহের দুর্গাপুর, গৌরীপুর, ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মণে চিকন ধান বিক্রি হয়। সাধারণত ৬৮ কেজি ধান থেকে ১ মণ চাল পাওয়া যায়। সেই হিসাবে এক মণ চালের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা।

কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন হোটেল-মোটেল ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় চালের চাহিদা কমে গেছে। সে জন্য বর্তমানে শেরপুরের বিভিন্ন বাজারে প্রতি মণ সুগন্ধি চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায়। এতে প্রতি মণ চালে ব্যবসায়ীদের ১ হাজার টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। মণপ্রতি হাজার টাকা লোকসান দিয়েও নগদে ওই চাল বিক্রি করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, শেরপুরে গত ২০১৯-২০ আমন মৌসুমে ২১ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার মেট্রিক টন তুলসীমালা, চিনিশাইল, কালিজিরা ও ব্রি ধান-৩৪ জাতের সুগন্ধি মিহি (সরু) আতপ ধান হয়েছে।

গত রোববার সরেজমিন শহরের ঢাকলহাটি, দিঘারপাড় ও নৌহাটা এলাকার বিভিন্ন চালকল ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার চালকলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সুগন্ধি আতপ চাল অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মজুত থাকায় বস্তার ওপর জমেছে ধুলার আস্তর।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে ঢাকলহাটি এলাকার কাকন রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. কাশেম মোল্লা বলেন, প্রতিবছর রাজধানীর চাহিদার প্রায় অর্ধেক চাল শেরপুর জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর সেই চাহিদায় ধস নেমেছে। তাঁর নিজের চালকলে প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন চাল অবিক্রীত পড়ে আছে বলে জানান তিনি।

শ্যামলী অটোড্রায়ার রাইস মিলের ব্যবস্থাপক নারু ভৌমিক জানান, তাঁদের চালকলের উৎপাদিত চাল মণে ১ হাজার টাকা লোকসানে বিক্রি করা হয়েছে।

সুগন্ধি চাল রপ্তানির ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মো. ফরহাদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, চালকলের মালিকেরা আবেদন করলে বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।