>• দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও বিক্ষোভ
• গতকাল সূচকের বড় উত্থানে কিছুটা স্বস্তি
• বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হননি
পতন ঠেকাতে অবশেষে টেনে তোলা হলো দেশের শেয়ারবাজারের সূচক। এ জন্য লেনদেন শুরুর আগে থেকেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ফোন করে শেয়ার কিনতে বলা হয়। পাশাপাশি ফোন করে বিক্রির চাপও কমানো হয়। তাতে দিন শেষে দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই সূচকের বড় ধরনের উত্থান ঘটে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল বৃহস্পতিবার ৬৫ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি এদিন ১৫৯ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে। দুই বাজারে সূচকের বড় ধরনের উত্থান হলেও লেনদেনে তেমন কোনো তারতম্য ছিল না। ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৮৪ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৯ কোটি টাকা বেশি। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন হয় প্রায় ১২ কোটি টাকা, যা আগের দিনের প্রায় সমপরিমাণ।
দরপতনের প্রতিবাদে গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা এ সময় বাইব্যাক আইন করার দাবি জানান। বাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির শেয়ারের বাজারমূল্য ইস্যু দামের নিচে নেমে গেছে, সেসব কোম্পানিকে শেয়ার কিনতে বাধ্য করতে এ আইন চালুর দাবি জানানো হয়।
এদিকে, বিএসইসির গতকালের কমিশন সভায় বাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ শ্রেণির কোম্পানির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংস্থাটির পরিচালক মনসুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিকে জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিষয়ে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার বাজারে জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২১। কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড মিলিয়ে বাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১২ শতাংশই জেড শ্রেণিভুক্ত। এসব কোম্পানির মধ্যে অনেকগুলোরই কোনো অস্তিত্ব নেই। তারপরও জেড শ্রেণির কোম্পানির শেয়ার নিয়ে প্রায়ই বাজারে কারসাজি ঘটে। কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তেমন কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি। এ অবস্থায় গতকাল মন্দ মানের এসব কোম্পানির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে কমিটি গঠিত হয়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা দরপতন ঠেকাতে গতকাল লেনদেনের শুরু থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বেশ ক্রেতার ভূমিকায় ছিল। পতন ঠেকাতে লেনদেনের শুরু থেকেই বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনার প্রবণতা ছিল।
টানা পতনের পর গতকাল সূচকের বড় ধরনের উত্থানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হতে পারেননি তাঁরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এক দিনের উত্থানে আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, টানা পতন থেকে বাজারকে বের করে আনতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করার মাধ্যমে সূচক টেনে তোলা হয়েছে। কিন্তু লেনদেনের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতে হলে উত্থানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। গতকাল যেভাবে বাজার বেড়েছে, সেটি স্থায়ী হবে কি না, তা আরও কয়েক দিন না গেলে বোঝা যাবে না।