ইআরএফের সংলাপ

দেশের পুঁজিবাজারে আর পতন সম্ভব নয়

আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পরিবর্তনের আশা দেখালেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান।

  • ছয়টি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা চলছে।

  • বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আগামীকাল বিএসইসির বৈঠক।

  • তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করের পার্থক্য ১৫% করার প্রস্তাব।

কারসাজি করে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের মতো পুঁজিবাজার আর ফেলে দেওয়া (পতন ঘটানো) সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার করা হয়েছে; আধুনিকায়ন হয়েছে। তাই চাইলেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাজারে কারসাজির সুযোগ নেই। আগামী দুই বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে। তখন আমরা “শ্যালো ক্যাপিটাল মার্কেট” থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।’

গতকাল শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ইআরএফ ডায়ালগ অন বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমি’ শীর্ষক এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বিজয়নগরে পল্টন টাওয়ারে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংলাপ সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী।

এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যাংকের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে কোথাও বিনিয়োগ সম্ভব নয়। দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হলে বন্ডের বিকল্প নেই। বিশ্বের অনেক দেশেই বন্ড ব্যবস্থা খুব জনপ্রিয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারে উন্নীত হবে। রিজার্ভ বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। রিজার্ভের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এটি যদি না করতে পারি, একসময় এই রিজার্ভের টাকা আমাদের জন্য দায়বদ্ধতা (লায়াবিলিটি) তৈরি করবে।’

দেশের ছয়টি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান। তবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর নাম উল্লেখ করেননি তিনি। অবশ্য প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে একটা সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন। বলেন, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, যাদের বার্ষিক টার্নওভার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক টার্নওভার ২৫০ কোটি ডলারের বেশি বলে জানান তিনি।

শেয়ারবাজারে দুর্বল কোম্পানি আনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার দুটি চোখ সামনে। পেছনে যা হয়েছে, সেখানে যদি সময় দিই, তাহলে সামনে এগোতে পারব না।’

ভালো কোম্পানি কেন পুঁজিবাজারে আসে না—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সমস্যা হলো, তাদের তো ঋণ করতে হয় না। চাইলেই তারা বিদেশি সংস্থা থেকে ২ শতাংশ দিয়ে ঋণ পেয়ে যাচ্ছে। তাই তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হয় না। তা ছাড়া বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করের ব্যবধান মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ। এই ব্যবধান কমপক্ষে ১৫ শতাংশ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আগামী বাজেটে এই দুই খাতে করের ব্যবধান ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছি। তা না হলে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে না।’

সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে না আসার কারণ হিসেবে শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, এখানে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি আছে। কোম্পানির বোর্ডে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেখানে অভিজ্ঞ মানুষের খুব অভাব আছে।

পদ্মা ব্যাংক থেকে টাকা সরানো নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত ও সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সংলাপে। তখন তিনি বলেন, ‘আমরা পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীরের চিঠি পেয়েছি। আমরা ব্যাংকের কথাও শুনব। আমরা দুই পক্ষের বক্তব্যই পর্যালোচনা করব। দেশের বিদ্যমান আইনে যা বলা আছে, তা-ই প্রয়োগ করা হবে। এতটুকু বিচ্যুত হব না আমরা।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের বাজেটের আকার ৫ লাখ কোটি টাকা। অথচ প্রতিবছর আমাদের দেশে আইপিওর মাধ্যমে মাত্র এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা তোলা হয়। এটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দেশে শিল্পায়ন হতে হলে পুঁজিবাজার থেকে টাকা ওঠানোর পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে।’