করোনাভাইরাসের অতিমারির সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা ছিল শুরু থেকেই। অতিমারি ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সামাজিক সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়ে অর্থনীতি। কাজ হারায় অনেক মানুষ। অর্থনৈতিক দুরবস্থায় টিকতে না পেরে এই শহর ছাড়েন অনেকেই। এমন দুর্যোগেও আশা জাগিয়েছে ইন্টারনেট।
সোশ্যাল মিডিয়া পেজনির্ভর উদ্যোগের মাধ্যমে কেউ শুরু করেছেন নতুন জীবন। আবার কেউ কেউ স্থবির ব্যবসাকেও দিয়েছে গতি। স্থবির অর্থনীতিতেও বেড়েছে ই-কমার্স বাজারের আকার, অনলাইন লেনদেনও বেড়েছে আশাতীত।
ইন্টারনেটে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবসা করে ভাগ্য বদল করেছেন যাঁরা তাঁদের একজন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এনায়েতনগরের বাসিন্দা সাইফুল্লাহ সাইফ। করোনা আসার আগে সাইফ স্থানীয় একটি স্কুলে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক ছিলেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক না হওয়ায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেতন বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। প্রথম কয়েক মাস নিদারুণ কষ্টে কাটে সাইফের। এরপর ইন্টারনেটই হয়ে ওঠে সাইফের জীবনের রক্ষাকর্তা।
সাইফ বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই দেখছিলাম মানুষ ফেসবুকে এটা-সেটা বিক্রি করে। আমি অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই আমার গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে সেখানের বিখ্যাত প্যাড়া সন্দেশ আনি। সে সন্দেশ বিক্রির জন্য ফেসবুকে একটা পেজ খুলি। মাত্র জুন মাসে খোলা পেজ থেকে এখন আমার ভালো আয় থাকে।’
প্রথমে একটি পণ্য থাকলেও এখন সেখানে ঘি, শর্ষের তেলের মতো নানা আঞ্চলিকভাবে বিখ্যাত পণ্য যোগ হচ্ছে। সারা দেশে যেমন পণ্য পাঠানো হচ্ছে তেমনি সারা দেশ থেকেও নানা পণ্য যুক্ত হচ্ছে তাঁর পেজে। সম্প্রতি তিনি যুক্ত করেছেন খুলনার মিখ্যাত মসলা চুইঝাল। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন বিদেশ থেকেও আসছে অর্ডার।
করোনার স্থবির অর্থনীতিতে সাইফের মতো ছোট ছোট উদ্যোগ যে কতগুলো তৈরি হয়েছে, তা হিসাব করে বের না করা গেলেও বেড়েছে অনলাইনে লেনদেন। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) দেওয়া এক তথ্যমতে, অনলাইন লেনদেন ২০১৭ সালে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো ছিল। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে যথাক্রমে ৩ ও ৪ কোটি টাকা করে লেনদেন বেড়েছে। ২০২০ সালে এসে এই বাজার দুই হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
শুধু টাকার লেনদেনই নয়, ই-ক্যাব বলছে অনলাইন বাজারের আকার ২০২০ সালে দাঁড়াবে ১৬ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে এর আকার ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকার।
করোনার প্রভাবে রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক ভৌত ব্যবসা রক্ষার হাতিয়ারও হয়ে উঠেছে অনলাইন। বগুড়ার রেস্টুরেন্ট ও বুটিক ব্যবসায়ী সামিয়া আফরিন গণি তেমনই একজন। সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামিয়া বুটিকের কিছু পণ্য নিয়ে যান বাসায়। সেগুলোই ছবি তুলে আপলোড করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আগে তাঁর ক্রেতা ছিল এলাকাভিত্তিক। এখন দেশজুড়েই তাঁর ক্রেতা। ভিডিও করে পণ্য দেখিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পণ্য বিক্রি করেন তিনি। অনলাইন–অফলাইন এখন একই কথা।
অনলাইনের এই প্রসার শুধু যে একক ক্রেতাদের লাভবান করেছে, তা–ই নয়, অনেক ক্রেতা মিলে তৈরি করেছে অনলাইন মেলাও। সম্প্রতি অনলাইন বিক্রেতাদের প্ল্যাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’-এর উদ্যোগে হয়ে গেল ‘ই-উদ্যোক্তা হাট’ ৩৪ উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করে এই হাটে। ই-উদ্যোক্তা হাটের সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রথম বছরেই হাট থেকে যে খুব সাড়া পাওয়া গেছে, এমন না। তবে প্ল্যাটফর্মটা উদ্যোক্তাদের পরিচিতি ঘটাতে বেশ সাহায্য করেছে। এখন একজন উদ্যোক্তার ক্রেতা অন্য উদ্যোগ থেকে পণ্য নিচ্ছে। এভাবে ক্রেতা বাড়ছে।’
ক্রেতাদের ইন্টারনেটে অভ্যস্ততার ফলে অপ্রচলিত পণ্যও সহজলভ্য হচ্ছে অনলাইনের বাজার। মসলা ও ঔষধি উদ্ভিদের গুঁড়া সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে সংসারী নামে একটি উদ্যোগ। এর একজন উদ্যোক্তা দোলনচাঁপা দত্ত জানান, করোনার কারণে মানুষের অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধি যথেষ্ট সহযোগিতা করে তাঁর উদ্যোগকে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো সাড়া পাচ্ছেন তিনি।
করোনায় ছোট ছোট অনলাইন উদ্যোগ লাভবান করছে প্রান্তিক উৎপাদকদেরও, জানান ই-ক্যাব-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ বছর প্রায় ২৭ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে অনলাইনে। গত কয়েক বছর ছোট করে অনলাইন হাট শুরু হলেও এবারের সাফল্য অভাবনীয়। এ ছাড়া ফল–সবজি সবই অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। এতে মধ্যস্বত্বভোগী লোপ পেয়েছে। উৎপাদকের মুনাফা বেশি থাকছে।’
অনলাইনের এই প্রসারে বেড়েছে পণ্য পৌঁছানোর ভৌত বাজারও। নতুন কুরিয়ার কোম্পানি তৈরি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোরও কাজ বাড়ছে। অনলাইন উদ্যোক্তাদের পণ্য সরবরাহে সহায়তা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ই–কুরিয়ার। এর প্রতিষ্ঠা বিপ্লব ঘোষ বলেন, ‘নতুন উদ্যোক্তা যুক্ত হওয়া এবং ডেলিভারি—দুই–ই বেড়েছে আমাদের। মানুষের অনলাইনে অভ্যস্ততা বাড়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।’
অনলাইন ব্যবসার এ রকম অগ্রগতির পরও মোবাইল ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে অনলাইন ব্যবসা এখনো পিছিয়ে আছে অনেকটাই। এই বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া হলে ইন্টারনেটই হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস।
সাইফ বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই দেখছিলাম মানুষ ফেসবুকে এটা-সেটা বিক্রি করে। আমি অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই আমার গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে সেখানের বিখ্যাত প্যারার সন্দেশ আনি। সে সন্দেশ বিক্রির জন্য ফেসবুকে একটা পেজ খুলি। মাত্র জুন মাসে খোলা পেজ থেকে এখন আমার ভালো আয় থাকে।’
প্রথমে একটি পণ্য থাকলেও এখন সেখানে ঘি, সরিষার তেলের মতো নানান আঞ্চলিকভাবে বিখ্যাত পণ্য যোগ হচ্ছে। সারাদেশে যেমন পণ্য পাঠানো হচ্ছে তেমনি সারাদেশ থেকেও নানান পণ্য যুক্ত হচ্ছে তার পেজে। সম্প্রতি তিনি যুক্ত করেছেন খুলনার মিখ্যাত মশলা চুইঝাল। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে এখন বিদেশ থেকেও আসছে অর্ডার।
করোনার স্থবির অর্থনীতিতে সাইফের মতো ছোট ছোট উদ্যোগ যে কতগুলো তৈরি হয়েছে তা হিসেব করে বের না করা গেলেও বেড়েছে অনলাইনে লেনদেন। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) এর দেওয়া এক তথ্যমতে, অনলাইন লেনদেন ২০১৭ সালে ১২শ কোটি টাকার মতো ছিল। ১৮ ও ১৯ সালে যথাক্রমে ৩ ও ৪ কোটি টাকা করে লেনদেন বেড়েছে। ২০২০ এ এসে এই বাজার দুই হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে।
শুধু টাকার লেনদেনই নয়, ই-ক্যাব বলছে অনলাইন বাজারের আকার ২০২০ এ দাঁড়াবে ১৬ হাজার ৬শ ১৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে এর আকার ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকার।
করোনার প্রভাবে রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক ভৌত ব্যবসা রক্ষার হাতিয়ারও হয়ে উঠেছে অনলাইন। বগুড়ার রেস্টুরেন্ট ও বুটিক ব্যবসায়ী সামিয়া আফরিণ গণি তেমন একজন। সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামিয়া বুটিকের কিছু পণ্য নিয়ে যান বাসায়। সেগুলোই ছবি তোলে আপলোড করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আগে তার ক্রেতা ছিল এলাকা ভিত্তিক। এখন দেশজুড়েই তার ক্রেতা। ভিডিও করে পণ্য দেখিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পণ্য বিক্রি করেন তিনি। অনলাইন অফলাইন এখন একই কথা।
অনলাইনের এই প্রসার শুধু যে একক ক্রেতাদের লাভবান করেছে তাই নয়, অনেক ক্রেতা মিলে তৈরি করেছে অনলাইন মেলাও। সম্প্রতি অনলাইন বিক্রেতাদের প্ল্যাটফর্ম চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেবো-র উদ্যোগে হয়ে গেলো ‘ই-উদ্যোক্তা হাট’ ৩৪ উদ্যোক্তার অংশগ্রহণ করে এই হাটে। ই-উদ্যোক্তা হাটের সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রথম বছরেই হাট থেকে যে খুব সাড়া পাওয়া গেছে এমন না। তবে প্ল্যাটফর্মটা উদ্যোক্তাদের পরিচিতি ঘটাতে বেশ সাহায্য করেছে। এখন একজন উদ্যোক্তার ক্রেতা অন্য উদ্যোগ থেকে পণ্য নিচ্ছে। এভাবে ক্রেতা বাড়ছে।’
ক্রেতাদের ইন্টারনেটে অভ্যস্থতার ফলে অপ্রচলিত পণ্যও সহজলভ্য হচ্ছে অনলাইনের বাজার। মশলা ও ঔষধি উদ্ভিদের গুঁড়ো সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে সংসারী নামে একটি উদ্যোগ। এর একজন উদ্যোক্তা দোলনচাঁপা দত্ত জানান, করোনার কারণে মানুষের অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধি যথেষ্ট সহযোগিতা করে তার উদ্যোগকে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো সাড়া পাচ্ছেন তিনি।
করোনায় ছোট ছোট অনলাইন উদ্যোগ লাভবান করছে প্রান্তিক উৎপাদকদেরও, জানান ই-ক্যাব-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ বছর প্রায় ২৭ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে অনলাইনে। গত কয়েকবছর ছোট করে অনলাইন হাট শুরু হলেও এবারের সাফল্য অভাবনীয়। এছাড়া ফল সবজি সবই অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে এতে মধ্যস্বত্ত্বলোভী লোপ পেয়েছে। উৎপাদকের মূনাফা বেশি থাকছে।’
অনলাইনের এই প্রসারে বেড়েছে পণ্য পৌঁছানোর ভৌত বাজারও। নতুন কুরিয়ার কোম্পানি তৈরি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোরও কাজ বাড়ছে। অনলাইন উদ্যোগদের পণ্য সরবরাহে সহয়তা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ই কুরিয়ার। এর প্রতিষ্ঠা বিপ্লব ঘোষ বলেন, নতুন উদ্যোক্তা যুক্ত হওয়া এবং ডেলিভারি দুই বেড়েছে আমাদের। মানুষের অনলাইনে অভ্যস্থতা বাড়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।’
অনলাইন ব্যবসার এহেন অগ্রগতির পরেও মোবাইল ইন্টারনেটের উচ্চ মূল্য এবং পরিবহণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে অনলাইন ব্যবসা এখনও পিছিয়ে আছে অনেকটাই। এই বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া হলে ইন্টারনেটই হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস।