এক দিনের ব্যবধানে নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের কমেছে ১০০ টাকা। চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেওয়ার খবরে স্থানীয় বাজার থেকে মিলমালিকেরা (চালকলের মালিক) ধান কেনা কমিয়ে দেওয়ায় এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে কৃষকদের।
তবে নওগাঁর বিভিন্ন চালের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধানের দাম কমলেও চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় খুচরা বাজারেও আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি করা চাল দেশের বাজারে ঢুকলে চালের দাম কমতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় ২০১৭-১৮ সালের মতো নিয়ন্ত্রণহীন আমদানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যাপক পরিমাণ চাল আমদানি হলে দেশের চালের বাজার অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। এই পরিস্থিতে মিলাররা চিন্তাভাবনা করে ধান কিনছেন। আমদানি করা চাল দেশের বাজারে ঢুকলে ভবিষ্যতে ধান-চালের বাজার আরও পড়ে বড় ধরনের লোকসান হতে পারে—এমন আশঙ্কায় ধান কেনা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিলাররা।
গতকাল রোববার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। নতুন শুল্কহারে চাল আমদানি করতে আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারবেন আমদানিকারকেরা।
নওগাঁর বড় ধানের মোকাম নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া ও মান্দা উপজেলার সতীহাট বাজার। বাজার দুটিতে সপ্তাহে প্রতিদিন ধান কেনাবেচা হয়। আজ সোমবার সকালে ওই সব বাজারের আড়তদার ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারটিতে প্রতি মণ মোটা জাতের স্বর্ণা-৫ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ৬০ টাকায়। আগের দিন এই ধান বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৬০ থেকে ১ হাজার ১৭০ টাকায়। আর গুটি স্বর্ণা (স্বর্ণা-৫১) আগের দিন ১ হাজার ১২০ থেকে ১ হাজার ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০ থেকে ১ হাজার ৪০ টাকায়।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেন আজ সকালে এসেছিলেন ছাতড়া বাজারে ধান বিক্রি করতে। কত টাকায় ধান বিক্রি করলেন, তা জানতে চাইলে মলিন মুখে তিনি বলেন, ‘সেই কথা আর কইয়েন না। গতকাল শুনলাম, প্রতি মণ স্বর্ণা-৫ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০ টাকা দরে। সংসারের দরকারে আজ ৫০ মণ ধান হাটে আনছিলাম। কিন্তু ধানের দর শুনে তো মনটা খারাপ হয়্যা গ্যাল। প্রতি মণ ধানে ১০০ টাকাই নাই। এ রকম আচমকা ধানের দর কমে য্যাবে, হামি ধারণাই করিনি।’
হঠাৎ ধানের দর কমে যাওয়ায় কৃষক ফিরোজ হোসেনের মতো অনেককেই বাজারে ধান বিক্রির জন্য হাহুতাশ করতে দেখা গেছে।
ছাতড়া বাজারের ধানের আড়তদার তাহির উদ্দিন বলেন, ‘চাল আমদানির খবর শোনার পরপরই অনেক মিলার আড়তদারদের জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আগে যেখানে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ গাড়ি ধান কিনতেন, এখন সেখানে এক থেকে দুই গাড়ি ধান কিনবেন। আমার মহাজনও (মিলমালিক) জানিয়ে দিয়েছেন, চার গাড়ির জায়গায় সপ্তাহে এখন দুই গাড়ি করে ধান কিনবেন। এ ছাড়া প্রশাসন ধান-চালের অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। গুদামে ধানের মজুত রাখলে যেকোনো মুহূর্তে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করতে পারেন। এ অবস্থায় আমি ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছি। আমার মতো অন্য আড়তদারদেরও একই অবস্থা।’
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, সরকার চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেবে। এই খবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা চাল কেনা কমিয়ে দেন। এতে মোকামে চাল বিক্রি একেবারেই কমে গেছে।
এর মধ্যে গতকাল রোববার সরকার ঘোষণা দিয়েছে চাল আমদানির শুল্ক প্রায় ৩৭ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এই খবরে কিছুটা হলেও আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালের মতো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চাল আমদানি হলে ধানের দাম ২০১৮-১৯ সালের মতো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় নেমে আসতে পারে। এ অবস্থায় আমাদের প্রস্তাব হলো সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানি করুক, তবে সেটা যেন নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশে যতটা চালের প্রয়োজন রয়েছে, কেবল ততটুকুই যেন আমদানি করা হয়।’