আবার চোখ রাঙাচ্ছে সোনা

সোনার দামে হয়তো এবার লাগাম আসবে—নভেম্বরের শেষ দিকে এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এক মাস না যেতেই সেই আশার গুড়ে বালি। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকস। একই সঙ্গে সোনা বিক্রি বেড়ে যাবে মানুষের, এমন সম্ভাবনাও আছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ৯০০ ডলারে উঠতে পারে।

এ বছর সোনার দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। তবে দাম বৃদ্ধির ধারা মূলত গ্রীষ্মকালে বজায় ছিল। সেপ্টেম্বর মাস থেকে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৮৫০ ডলারে স্থিতিশীল। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য কোমেক্স বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৮৪৮ ডলার। গতকালের চেয়ে তা শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি।

পূর্বাভাসের ব্যাপারে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস বেশ ইতিবাচক। তবে কিছু ঝুঁকির কথাও বলেছে তারা। মূলত অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্তিমিত থাকার কারণে মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকেছে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকস বলছে, আগামী বছর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত হতে পারে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের পণ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েল বারম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কম থাকায় ২০২১ সাল জুড়ে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ১০০ ডলারের কাছাকাছি থাকবে বলে আমরা ধারণা করছি। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু ঝুঁকি আছে। সেটা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুততর হলে মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনা থেকে বিনিয়োগ তুলে নিতে পারে, এমন সম্ভাবনাও আছে।’

গত আগস্ট মাসে সোনার দাম নতুন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে, আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৭৫ ডলার। বছরের প্রথম দিকে কঠোর লকডাউনের সময় সুদহার কমে যায়। পাশাপাশি মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার দিকে ঝোঁকে। এরপর শেয়ারবাজার আবার চাঙা হলে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়। এরপর টিকার খবর আসতে শুরু করলে নভেম্বরে সোনার দাম আরও বেড়ে যায়।

এদিকে বিভিন্ন মূল্যায়নকারী সংস্থা বলছে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তাতে অনিশ্চয়তা কেটে যাবে।

তবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার তেমন একটা বাড়তে দেবে না। পাশাপাশি, পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অনেকটা নির্ভর করবে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর। এতে একধরনের অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। টিকা দেওয়া নিয়েও নানা জটিলতা আছে। ফলে সোনার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেই যাবে, সেটা হলফ করে বলা কঠিন। সোনার দাম বৃদ্ধির পূর্বাভাস এ কারণেই।

‘বর্তমানে বিশ্ববাজারে সোনার যে দাম, তাতে দেশে ৭৪ হাজার টাকা ভরি হওয়া উচিত। মূলত সর্বশেষ আমরা যে দাম সমন্বয় করেছিলাম তখন একটু বেশি কমানো হয়েছিল। যাই হোক, বর্তমানে সোনার বাজারে দাম উত্থান–পতনের মধ্যে রয়েছে। আমরা বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
দেওয়ান আমিনুল ইসলাম, সহসভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি

গত আগস্টের যখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, তখন দেশের বাজারে প্রতি ভরির দাম গিয়ে পৌঁছায় ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায়। সেটিই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম। গত ৩০ নভেম্বর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমে হয়েছিল ১ হাজার ৭৭৭ ডলার। তারপর থেকেই আবার দাম বাড়ছে।

নভেম্বরের শেষের দিকে দাম নিম্নমুখী থাকায় দেশের বাজারে ২ ডিসেম্বর সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। তার আগে ২৫ নভেম্বর কমানো হয়েছিল আড়াই হাজার টাকা। বর্তমানে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকার কিনতে লাগছে ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন করে দাম বাড়তে থাকায় দেশে কী হবে—জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববাজারে সোনার যে দাম, তাতে দেশে ৭৪ হাজার টাকা ভরি হওয়া উচিত। মূলত সর্বশেষ আমরা যে দাম সমন্বয় করেছিলাম তখন একটু বেশি কমানো হয়েছিল। যাই হোক, বর্তমানে সোনার বাজারে দাম উত্থান–পতনের মধ্যে রয়েছে। আমরা বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জুয়েলার্স সমিতির পরিচালনা পর্ষদ আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।