প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলামকে সংবর্ধনা দিয়েছে বণিক বার্তা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। এ দুই গুণীজনের জীবন ও কর্মের প্রতি সম্মান ও স্বীকৃতি জানাতে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ জন্য গতকাল সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজন করা হয় ‘গুণীজন সংবর্ধনা ২০২৩’।
ষষ্ঠবারের মতো এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বণিক বার্তা ও বিআইডিএস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। আর আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
অসুস্থতার কারণে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সশরীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর পক্ষে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুজিবুল হক সম্মাননা গ্রহণ করেন। আর মসিউর রহমান সশরীর উপস্থিত থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের হাত থেকে সম্মাননা নেন।
সংবর্ধিত গুণী ব্যক্তি হিসেবে মসিউর রহমান তাঁর বক্তব্য বলেন, ‘এই সম্মাননা পাওয়ায় আমি আনন্দিত। আমি যাঁদের জ্ঞান ও সহযোগিতায় উপকৃত হয়েছি, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
অনলাইনে যুক্ত হয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সম্মাননা পেলে দায়িত্ব বেড়ে যায়। আমি চেষ্টা করব বাকি জীবন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত দুই গুণীজনকে নিয়ে বক্তব্য দেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন সংবর্ধিত দুই অর্থনীতিবিদের সহকর্মী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি সংবর্ধিত দুই গুণীজনকে নিয়ে বলেন, ‘মির্জ্জা আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুর দিকে আমার ছাত্র ছিল। ভালো ছাত্র হিসেবে ভালো ক্যারিয়ার গড়েছে। দেশীয় নীতিনির্ধারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার কাজের ব্যাপ্তি ছিল। মসিউর রহমানকে আমি বুদ্ধিদীপ্ত ও সৃজনশীল সমাধান দিতে অভ্যস্ত একজন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করি। দুজনকেই আমি অভিনন্দন জানাই।’
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ সচরাচর দেখা যায় না। তাই আমি আশা করব, বণিক বার্তা ও বিআইডিএসের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সম্মাননা পাওয়া দুই ব্যক্তিই আমার অত্যন্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধার মানুষ।’
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কর্মঠ এবং কাজের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান মানুষ। আর মসিউর রহমান আবেগহীন পেশাজীবী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মসিউর রহমান স্যার ঢাকা কলেজে আমাদের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। তিনি এখনো নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। আর আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে সরাসরি কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে। নীতির প্রশ্নে তিনি আপসহীন।’
সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ‘আমি তাঁদের দুজনকেই দেখি সামষ্টিক অর্থনীতির পুরোধা হিসেবে। তাঁরা বিষয়টা বেশ ভালো বুঝতেন।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো রওনক জাহান বলেন, ‘সহপাঠী হিসেবে মসিউর নিরহংকার ও সর্বদা সদালাপী। আর আজিজুল ইসলামের কাছ থেকে অনেক বিষয় শিখেছি ও জানতে পেরেছি।’
অনুষ্ঠানে সংবাদপত্রমালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘আজিজ সাহেবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে টকশোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তিনি অপ্রিয় সত্য কথা বলেন। আর মসিউর রহমানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বেশি দিন হয়নি। তিনি একজন রসিক ও হাস্যোজ্জ্বল মানুষ।’
স্বাগত বক্তব্যে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দেশের অনেক অর্থনৈতিক সংকটে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর মসিউর রহমান অর্থনীতির নীতিনির্ধারণে কয়েক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক ও মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, এমজেএল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম জে. চৌধুরী, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাঈনুদ্দিন মোনেম প্রমুখ। আর গুণীজন সম্মাননা পাওয়া দুই ব্যক্তিকে নিয়ে ধারণ করা বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ও বিভিন্ন খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।