বিদেশ থেকে টাকাপয়সা সিঙ্গাপুরে আনছেন—এমন অনেক মানুষকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এসব অর্থ অপরাধের মাধ্যমে উপার্জিত বলে সন্দেহ করা হয়।
প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল ২০২১ সালে। সিঙ্গাপুরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তখন লক্ষ করে যে সম্ভবত ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে ব্যাংকে অর্থ রাখা হয়েছে। তাই অল্প কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রাথমিক তদন্তের কাজে লাগানো হয়, যাতে সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারীরা সতর্ক না হয়ে যান। ২০২২ সাল পর্যন্ত তদন্তের পর বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল।
দ্য স্ট্রেইটস টাইমস জানায়, বিদেশ থেকে টাকাপয়সা সিঙ্গাপুরে নিয়ে আসছেন—এমন বেশ কিছু মানুষকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এসব অর্থ অপরাধের মাধ্যমে উপার্জিত বলে সন্দেহ করা হয়। কিছু মানুষ আবার পরস্পর আত্মীয়। এরপর গত ১৫ আগস্ট পুরো দ্বীপজুড়ে যে অভিযান চালানো হয়, তাতে বিপুল সম্পদ জব্দ কিংবা ব্যবহারের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।
সব মিলিয়ে এমন সম্পদের পরিমাণ ২৮০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলারের বেশি, যা ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ (বাংলাদেশের প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা)। এটাকে বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থ পাচারের ঘটনা বলে মনে করা হয়।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় মন্ত্রী জোসেফিন টিও এ-সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্নের জবাবে দেশটির পার্লামেন্টে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেসব তথ্যসূত্র তাঁরা ২০২১ সালে পেয়েছিলেন, তার মধ্যে বেশ কিছু তথ্য এসেছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কোম্পানি থেকে।
জোসেফিন টিও বলেন, ‘খুব নীরবে পুলিশ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং এরপর তদন্ত চালায়। সন্দেহভাজনেরা যাতে কিছু জেনে না যান, সে জন্য খুব কমসংখ্যক কর্মকর্তাকে এ কাজে লাগানো হয়েছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, দেখিয়ে-শুনিয়ে কিছু করা হবে না।’
জোসেফিন টিও জানান, সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ও তাঁদের সহযোগী, তাঁদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও তাঁদের সম্পদের ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে পুলিশ কাজ করেছে। তদন্ত যতই এগিয়েছে, ততই অপরাধের ব্যাপারে আরও বেশি তথ্য পাওয়া গেছে। আরও বেশি ব্যক্তি ও সিঙ্গাপুরে রাখা তাঁদের সম্পদের ব্যাপারে তথ্য উঠে এসেছে।
অর্থ পাচারের ঘটনায় এ ধরনের তদন্ত চালানো যে কতটা কঠিন, সেটাও তুলে ধরেন সিঙ্গাপুরের এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সন্দেহভাজনেরা আমাদের তদন্তের ব্যাপারে যদি সামান্যতম আভাসও পেতেন, তাহলে তাঁরা তাঁদের সম্পদ নিয়ে চম্পট দিতেন। ফলে তদন্ত আর আমাদের এত চেষ্টা সব বিফলে যেত।’
এরপর চলতি ২০২৩ সালের গোড়ার দিকে পুলিশ অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই দপ্তরের কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন যে সিঙ্গাপুরের মাটিতেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপর গত ১৫ আগস্ট কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের নেতৃত্বে ৪০০ পুলিশকে নিয়ে পুরো সিঙ্গাপুরজুড়ে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে ৯ জন পুরুষ ও ১ নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাঁদের বিরুদ্ধে পরের দিন অর্থ পাচার, জালিয়াতি ও গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে জঘন্য অর্থ পাচারের মামলা।
চীনের পরামর্শে এই অভিযান চালানো হয় বলে দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে, সে সম্পর্কে মন্ত্রী জোসেফিন টিও বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অসত্য। আমাদের আইন আমরা কীভাবে প্রয়োগ করব, সে সম্পর্কে সিঙ্গাপুরকে অন্য কোনো দেশের উপদেশ দিতে হবে না। যদি কোনো বিষয়ে আমাদের স্বার্থ না থাকে, তাহলে আমরা কিছু করি না।’
জোসেফিন টিও বলেন, এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি এমন অনেকে তদন্তে সহযোগিতা করছেন। পুলিশ আরও কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে চাইলেও তাঁরা এখন আর সিঙ্গাপুরে নেই। তবে অর্থ পাচারের অভিযোগে আরও গ্রেপ্তার ও সম্পদ জব্দ হতে পারে বলে সিঙ্গাপুরের মন্ত্রী জানান।