চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর

মতবিনিময় সভা

বন্দরকে দক্ষভাবে ব্যবহার করতে হবে

কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং নেপালের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে স্থিতিশীল ভূরাজনৈতিক অবস্থা তৈরি করা সম্ভব। বাইরের শত্রু তখন খুব সহজে আমাদের দুর্বল করতে পারবে না।’

গতকাল রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ‘আনলকিং ফিউচার: স্ট্র্যাটেজিস ফর এনহান্সিং চিটাগং পোর্ট ক্যাপাসিটি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় ফরহাদ মজহার এসব কথা বলেন। বন্দর সুরক্ষা কমিটি নামে নতুন একটি সংগঠন আয়োজিত এই সভায় তিনি বন্দরকে দক্ষভাবে ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে বিকাশ লাভ করায় জোর দেন।

সভায় ফরহাদ মজহার বলেন, গণ–অভ্যূত্থানের মূল চেতনা ধারণ করে বন্দরকে গড়ে তুলতে হবে। বন্দরকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে পারলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আসবে। এ জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন ও রক্ষা করার কথাও বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য মো. জাফর আলম বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর প্রকল্প যখন নেওয়া হয় তখন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল। তখন মাতারবাড়ীর পরিবর্তে পায়রায় বন্দর নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অথচ পায়রার রাবনাবাদ চ্যানেলে যেভাবে পলি জমে তাতে সেখানে বন্দর নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ জন্য সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাইও হয়নি। আবার ১০ বছর আগে বে টার্মিনাল প্রকল্প নেওয়া হলেও এখনো তা একই জায়গায় আছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখন বে টার্মিনাল প্রকল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে, এটা খুবই আশার কথা। বন্দরের প্রকল্পগুলো নিতে হবে জনগণের স্বার্থে, যেখানে গোপন কিছু থাকবে না।

সভায় বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম বলেন, বন্দরের নীতিনির্ধারণের কাজে সহায়তার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা দরকার, যারা বাস্তবসম্মত পরামর্শ দিয়ে বন্দরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বন্দরে বর্তমানে কর্মরত ও সাবেক কর্মকর্তাদের অনেকে বাস্তবসম্মত পরামর্শ দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন। তাঁদের এই কমিটিতে রাখা যায়।

মতবিনিময় সভায় বন্দরের পর্ষদ সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর এম ফজলার রহমান, উপসংরক্ষক মো. ফরিদুল আলম, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন আহমেদ ফেরদৌস।

 

বিএসসিতে নৌপরিবহন উপদেষ্টা

এদিকে গতকাল রোববার পতেঙ্গা এলাকার বোট ক্লাবে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিএসসির বহরকে বড় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া শিপিং করপোরেশনের অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনা হবে। এক থেকে পাঁচ বছর ব্যবহার হয়েছে, এমন জাহাজ কেনার জন্য খোঁজখবর করছি আমরা।’

উপদেষ্টা বলেন, বিএসসি সরকারকে পৌনে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ ফেরত দিয়েছে। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনা বড় দৃষ্টান্ত। শিপিং করপোরেশনের ওপর শেয়ারহোল্ডারদের আস্থার কারণেই এই কাজটি সম্ভব হয়েছে।

সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়।

বিএসসির আয়–ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক জানান, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সংস্থাটির মোট আয় হয়েছে ৫৯৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে পরিচালন ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। প্রশাসনিক ও আর্থিক খাত মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ৩১১ দশমিক ৬০ কোটি টাকা। কর সমন্বয়ের পর সংস্থার নিট মুনাফা হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা, যা গত ৫৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সভায় নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ ও বিএসসির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।