সর্বজনীন পেনশনের নিবন্ধন ও চাঁদা পরিশোধের জন্য মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে। ব্যবস্থাটিকে আরও জনবান্ধব করা হবে। এ জন্য গবেষণা ও সংস্কার করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) আওতায় নিয়ে আসা হবে পুরো প্রক্রিয়া। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের এসব কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে একমত পোষণ করে চলমান সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থাকে উজ্জীবিত করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
ঢাকায় সচিবালয়ে গতকাল সোমবার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা এমন পরামর্শ দেন। বৈঠকে পর্ষদের ১৬ সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খানসহ প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির (স্কিম) পটভূমি, বৈশিষ্ট্য, মোট গ্রাহকসহ বিনিয়োগের হালনাগাদ তথ্য উল্লেখ করে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা হয়। এতে জানানো হয়, গতকাল পর্যন্ত ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন চার ধরনের পেনশন কর্মসূচির গ্রাহক হয়েছেন। তাঁরা মোট ১৩১ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। তা থেকে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিনিয়োগ থেকে এরই মধ্যে যে মুনাফা হয়েছে, তা গত ৩০ জুন ভিত্তিক গ্রাহকদের হিসাবে দেখানো হবে। গ্রাহকেরা তাঁদের হিসাবে জমা করা টাকা ও মুনাফা দেখতে পারবেন। তবে কেউ টাকা তুলতে পারবেন না।
বৈঠকের পর জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে অর্থসচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। অর্থসচিব শুধু বলেন, অর্থ উপদেষ্টা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিকে জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন।
দেশের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় আনতে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামে চারটি সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করে তৎকালীন সরকার। পরে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামে আরেকটি পেনশন কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দেওয়া হলেও শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে তা থেকে পিছিয়ে যায় সরকার। এমনকি ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর যাঁরা সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁদের জন্যও ‘সেবক’ নামে একটি কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে সেটিও বাতিল করা হয়।
যাঁদের সর্বোচ্চ বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকা, সেসব দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য চালু করা হয় ‘সমতা’। এটির মাসিক চাঁদা এক হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০০ টাকা গ্রাহক নিজে দেন, বাকি ৫০০ টাকা সরকার দেয়। এতে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪। জমা হওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। তাঁদের জন্য চালু করা প্রগতিতে এখন পর্যন্ত জমা পড়েছে ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকা। এতে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ২২ হাজার ৪১০–এ উন্নীত হয়েছে।
নিবন্ধন করা ও চাঁদা দেওয়ার দিক থেকে বেশি পিছিয়ে প্রবাসীরা। প্রবাস কর্মসূচির মাধ্যমে মাত্র ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছেন ৯১০ জন। স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি, যেমন কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিদের জন্য চালু রয়েছে সুরক্ষা। এতে ৬৩ হাজার ১৭৪ জনের চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
গতকালের বৈঠকে উপস্থিত থাকা সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের ধারাবাহিক কার্যক্রমগুলো অর্থ উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। আমাদের কর্মপরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেছি। তিনি পেনশন কর্মসূচিকে আরও উজ্জীবিত করতে বলেছেন।’
সহজে পেনশন কর্মসূচির গ্রাহক হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ ১২টি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে। পেনশন–ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার বিষয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান গোলাম মোস্তফা।