আগামী ১০ বছরের জন্য ইরানের চাবাহার বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ভারত। দেশটি এই প্রথম বিদেশে কোনো সমুদ্রবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পেল। ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে ইরানের বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়াকে দেশটির কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যদিও ওয়াশিংটন এ বিষয়ে দিল্লিকে সতর্ক করে দিয়েছে।
হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, বন্দর পরিচালনার অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে ভারতের জন্য। প্রতিবেশী পাকিস্তানকে এড়িয়ে সরাসরি মধ্য এশিয়ার বাজার ধরার চেষ্টা করছে ভারত। সেই প্রচেষ্টার বড় সফলতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে এই বন্দরকে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান ও আফগানিস্তানের বাণিজ্যেও এর প্রভাব পড়বে।
সোমবার ভারতের জাহাজ ও বন্দরমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী মেহেরদাদ বাজরপাশের উপস্থিতিতে ভারতের ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল (আইপিজিএল) ও ইরানের পোর্ট অ্যান্ড ম্যারিটাইম অর্গানাইজেশনের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় বন্দর সংস্কারে প্রায় ১২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে আইপিজিএল। এ ছাড়া অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য ২৫ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
সংবাদে বলা হয়েছে, পাকিস্তান পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোকে করাচি বন্দর ব্যবহার করে বাণিজ্য করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ভারত চাবাহারকে লাভজনক বিকল্প হিসেবে তুলে ধরে। কাজাখস্তান, উজবেকিস্তানের মতো দেশ এই বন্দরের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসা বাড়াতে চায়।
চাবাহারের নিকটতম ভারতীয় বন্দর হচ্ছে গুজরাটের কান্দালা—দূরত্ব ৫৫০ নটিক্যাল মাইল। মুম্বাইয়ের দূরত্ব ৭৮৬ নটিক্যাল মাইল। সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের সঙ্গে চাবাহারকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই চুক্তিকে সমুদ্রবাণিজ্যের জন্য ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে অভিহিত করেছেন সর্বানন্দ সোনোয়াল। তিনি আরও বলেন, এই চুক্তি ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য, সামুদ্রিক সহযোগিতা ও ট্রান্সশিপমেন্টের নতুন যুগের সূচনা করবে।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর। এর মধ্যে বন্দরের শাহিদ বেহেশতি টার্মিনালের প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন করছে ভারত। দেশটি এখন পর্যন্ত সেখানে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ক্রেন ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।
দ্য হিন্দুর সংবাদে বলা হয়েছে, আরব সাগরে চাবাহারের পাশাপাশি ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবালকে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের সিটওয়ে বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়েও গত মাসে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চাবাহারের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় ভারত আফগানিস্তান, ইরান হয়ে রাশিয়া পর্যন্ত জলপথে পণ্য পরিবহনে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছাতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে এই বন্দর। বৃহত্তর ইউরেশিয়া (ইউরোপ-এশিয়া) অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে এই বন্দর মূল কেন্দ্র হবে।
তা ছাড়া এই বন্দরের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। পাকিস্তানের গোওদার বন্দর ও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে নয়াদিল্লির হাতে তুরুপের তাস হতে পারে এই বন্দর।
ট্রানজিট ও বন্দরকে ইরান-ভারত সম্পর্কের মূল স্তম্ভ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ইরাজ এলাহি। তিনি বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে সম্পর্কের সব ক্ষেত্রে নতুন গতি আসবে এবং যেসব প্রকল্প এত দিন ঝুলে ছিল, সেগুলো চালু হবে।
এদিকে এই চুক্তি সইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতা জারি করেছে। দেশটি বলছে, তেহরানের সঙ্গে যারা ব্যবসায়িক লেনদেনে করবে, তারা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে।